স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য বাধা তৈরি করে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানহানির মামলার আইনসহ এমন সব আইন সংশোধনের দাবি উঠেছে এক আলোচনা সভায়।
শনিবার সম্পাদক পরিষদের এই আলোচনা সভায় বলা হয়, মত প্রকাশের জন্য কোনো সাংবাদিক আদালতে যাওয়া রাষ্ট্রে প্রত্যাশিত নয়।
‘৫০ বছরের বাংলাদেশ : গণমাধ্যমের অর্জন ও আগামীর চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক ওই আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “দেশের স্বার্থে মত প্রকাশের জন্য একজন সাংবাদিককে আদালতে যেতে হবে, সেটা কখনও কাম্য নয়।”
সাংবাদিকদের কাঠগড়ায় নেওয়ার বিকল্প হিসেবে প্রেস কাউন্সিলকে সক্রিয় করার সুপারিশ করেন সৈয়দ মনজুরুল।
তিনি বলেন, “এটা এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে এর ওপর সবার আস্থা থাকে। যারা অন্য কিছুতে প্রভাবিত হবেন না।”
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বিচার বিভাগের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা মেহেরবানি করে একটু দেখুন। কিছু কিছু আইন আছে, সেগুলো কীভাবে প্রয়োগ হচ্ছে। যেমন, মানহানির মামলা।
“এখানে আইনে স্পষ্ট লেখা আছে, একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে একাধিক মামলা হতে পারে না। শুধুমাত্র সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি মামলা করতে পারবে। তাহলে কেন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একই ঘটনার জন্য অনেক অনেক মামলা হয়? যারা সংক্ষুব্ধ নয়, তাদের মামলাও গ্রহণ করা হয়? এটা কি আইনের অমান্য হল না?”
সাংবাদিকতায় বাধা পড়ে এমন আইন সংশোধনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “সবচেয়ে প্রধান যে আইন সাংবাদিকতাকে প্রতিহত করছে, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন।”
এই আইন প্রণয়নের সময় সাংবাদিকদের বিরোধিতার বিষয়টি তুলে ধরে মাহফুজ আনাম বলেন, “আজকে অভিজ্ঞতা কী? কতটুকু সাইবার ক্রাইম আপনারা এই আইন দিয়ে প্রতিহত করতে পেরেছেন?
“সাম্প্রদায়িকতার বিকট বীভৎস পরিণতি সাইবার স্পেসে হচ্ছে। আপনারা তো থামাতে পারেননি। কিন্তু এই আইন যত্রতত্রভাবে সাংবদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হচ্ছে। তাহলে এই আইন কি সাইবার সিকিউরিটি দিচ্ছে, না কি সাংবাদিকতাকে প্রতিহত করছে?”
উপনিবেশিক আমলে প্রণীত অফিশিয়াল সিক্রেটস আইন বাতিলেরও দাবি জানান তিনি।
ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, “যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হল, তখন আমরা সম্পাদকরা মানবন্ধন করেছিলাম। সরকার কোনো গুরুত্ব দেয়নি।
“একটা কর্তৃত্বপরায়ন শাসন ব্যবস্থা যখন প্রবলভাবে দেশ শাসন করছে, তখন গণমাধ্যম কীভাবে স্বাধীনতার চর্চা করবে?”
নিউ এইজ সম্পাদক নুরুল কবীর বলেন, “যৌক্তিক সমালোচনা করলে এখন রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয়। স্বাধীনতার দাবি করলে যখন মামলা হয়, তখন তাদের কাছে নত হওয়া মানে দাসত্ব করা। আমাদের আরও সংঘবদ্ধতার দরকার। সাহসী সাংবাদিকতার দরকার।”
সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বলেন, “গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এসে সাংবাদিকদের ঐক্য আমরা ধরে রাখতে পারিনি। ঐক্যে চিড় ধরেছে।”
সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজনের বিষযটি তুলে ধরে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, “সাংবাদিকদের মধ্যে অনেক সমিতি। রাজনৈদিক দলের মত বিভাজন। ঐক্যের অভাবের কারণে আপনাদের দাবিগুলো আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। ওয়েজ বোর্ড নিয়ে অনেকদিন ধরে আন্দোলন চলছে। আপনারা বলতে পারবেন না, যে একটা সন্তোষজনক বেতন বোর্ড হয়েছে।”
মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার সংবাদপত্রগুলোকে জনস্বার্থ, ন্যায়বিচার, সুশিক্ষা, পরিবেশ, নারী সুরক্ষা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার মতো বিষয়গুলোতে সচেতনতা তৈরির কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশের মুদ্রিত সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদের এই আলোচনায় সভায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহানও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।