মশক নিধনে স্টিয়ারিং কমিটিসহ সম্মিলিত উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার

Dengu20200402193341

মশা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর মশক নিধন ও সম্ভাব্য ডেঙ্গু মোকাবিলায় সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

এজন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ে/বিভাগের/সংস্থার দায়িত্বশীল প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী জাতীয়/স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হবে।

সম্মিলিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে দুই সিটি করপোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট এলাকা, বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ একযোগে মশক নিধন অভিযান শুরু করবেন। স্থানীয় সরকার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেবেন।

বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলনকক্ষে মশক নিধন ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ সংক্রান্ত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এতে সভাপতিত্ব করেন।

মন্ত্রী বলেন, সরকারি ভবন, লেক, পার্ক, খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর বা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মশা মারার কাজ করবে সিটি করপোরেশন।

দীর্ঘ ছুটির সময় বন্ধ থাকা সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো থেকে এডিস মশার উৎপত্তি যেন না হয় তা নিশ্চিত করারও নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩০ মার্চ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে ৬৪টি জেলায় ভিডিও কনফারেন্স করেন। এসময় তিনি করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি মশক নিধন এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এবং সিটি করপোরেশনের মেয়রদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হতে ভিডিও কনফারেন্সেসংযুক্ত হয়ে মশক নিধনে সর্বাত্বক উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। এ পরিপ্রেক্ষিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদুল্লাহ খন্দকার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামানসহ সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিতি ছিলেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ লেকগুলো পরিষ্কার করলে আমরা ওষুধ ছিটাবো। তাহলে মশা মরবে। এটাই সময় একসঙ্গে কাজ করার। আমি ১৫ মে দায়িত্ব পাবো, কিন্তু এখন থেকেই কাজ করে যাচ্ছি।

সভায় কৃষি সচিব জানান, তিনটি প্রতিষ্ঠান কীটনাশক আমদানি করে। তাদের কাছ থেকে যে কেউ কীটনাশক কিনতে পারে। তাছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকেও সরাসরি কীটনাশক আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সভায় ১২ দফা সিন্ধান্ত নেওয়া হয় বলে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

মশার উৎপত্তিস্থল যেমন শহরের সব খাল, নালা, দু’টি বাড়ির মধ্যবর্তীস্থলের অপরিচ্ছনন্ন স্থান, কাঁচাবাজার, সরকারি অফিসগুলো, সরকারি আবাসিক স্থাপনা জরুরিভিত্তিতে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। এডিস মশার বিস্তাররোধে অফিস ছুটিকালীন সব সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের টয়লেটের কমোডগুলো অত্যাবশ্যকীয়ভাবে বন্ধ রাখতে হবে।

নির্মাণাধীন ভবন এবং যেসব সরকারি/বেসরকারি স্থাপনা নিজ উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখবে না বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার অভাবে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যাবে সেসব ব্যক্তি, স্থাপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে আইন অনুযায়ী বার বার জরিমানার ব্যবস্থা করা হবে।

প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রতি ওয়ার্ডে ৮টি সাব কমিটি গঠন করে প্রতি কমিটিতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ২০ জন গণ্যমান্য ব্যক্তিতে অর্ন্তভূক্ত করে একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করতে হবে।

মশক নিধনে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার স্বার্থে মন্ত্রণালয়, সব সিটি করপোশেন, ঢাকা ওয়াসা সম্মিলিতভাবে কাজ করবে। সিটি করপোরেশগুলো আগামী সাতদিনের মধ্যে নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করবে।

ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মশক নিধন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এ সব প্রকল্পে প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সভায় জানানো হয়।

সম্ভাব্য ডেঙ্গু মোকাবিলায় সম্মিলিত উদ্যোগ হিসেবে এলজিআরডি মন্ত্রীর নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ে/বিভাগের/সংস্থার দায়িত্বশীল প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী জাতীয়/স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হবে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগের করণীয় নির্ধারণ করে মন্ত্রীর স্বাক্ষরে একটি আধা সরকারি পত্র পাঠানো হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একাধিক উদ্যোক্তা/আমদানিকারককে আমদানির সুযোগ দেওয়া হলে মশক নিধনে ব্যবহৃত কয়েল, অ্যারোসোলের মকো বাজারে তা সহজলভ্য হলে মানুষ স্ব স্ব উদ্যোগে হস্তচালিত মেশিন দিয়ে নিজস্ব আঙ্গিনার মশক নিধন করতে পারবে।

সম্মিলিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে দুই সিটি করপোরেশন, সেনা এলাকা, বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ একযোগে মশক নিধন অভিযান শুরু করবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেবেন।

ঢাকা শহরের খাল ও নালা এবং স্থাপনাগুলো একযোগে পরিচ্ছন্ন করার স্বার্থে সভায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত বিভাগ, রাজউক, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেওয়া হয়।

বর্তমানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে যে দীর্ঘমেয়াদী ছুটি চলমান আছে, এ সময়ের মধ্যে যেহেতু শহরে জনসাধারণ ও যানবাহনের চাপ কম আছে এ সময়টা পুরো ঢাকা শহরকে শতভাগ পরিষ্কার করার সুযোগ সিটি করপোরেশনকে নিতে হবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের চলমান পরিচ্ছন্নতা অভিযান সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। এর বাইরে উভয় সিটি করপোরেশনের ল্যান্ডফিলসহ অন্যান্য স্থাপনা ঢাকা ওয়াসা ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাধীন খাল বা নালাগুলো পরিচ্ছন্নতাকরণ কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। সংশ্লিষ্ট সব দফতর/সংস্থা সময় নির্ধারণ করে অবহিত করবেন। অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন) এ কার্যক্রম সমন্বয় করবেন।

Pin It