করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েই চলেছে।
জুনের পর জুলাই মাসেও ‘অস্বাভাবিক’ বিক্রি হয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে ‘নিরাপদ’ হিসেবে বিবেচিত সঞ্চয়পত্র।
চলতি অর্থবছরের প্রথম জুলাইয়ে মোট ৮ হাজার ৪৮০ কোটি ৩১ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের জুলাই মাসের ছয় হাজার ৯১ কোটি ৩৩ হাজার টাকার চেয়ে ৩৯ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, এক মাসের হিসাবে গত জুলাই মাসের সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাংলাদেশের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ।
এর আগে এক মাসে সবচেয়ে বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ৯ হাজার ৭২৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ৯ হাজার ৩২৩ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে মানুষ এখন চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে। তার উপর মুনাফার উপর করের হার বৃদ্ধি এবং নানা ধরনের কড়াকড়ি আরোপের পরও সঞ্চয়পত্র বিক্রির এই উল্লম্ফনের সুনির্দিষ্ট কারণ নিয়ে ধোঁয়াশায় আছেন অর্থনীতি গবেষকরা।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত বলেন, “সঞ্চয়পত্র বিক্রির এই উল্লম্ফন সত্যিই অস্বাভাবিক। জুনের পর জুলাই মাসেও বেশি বিক্রি!”
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, “এই কঠিন সময়ে মানুষ টাকা পাচ্ছে কোথায়? বুঝতে পারছি না।”
তবে এর দুটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
আহসান মনসুর বলেন, “প্রথমত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের একটি অংশ দিয়ে মানুষ সঞ্চয়পত্র কিনছে। আগেও কিনত, তবে এখন রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ায় এই অঙ্ক বেড়েছে।
“এছাড়া অন্য যে কোনো সঞ্চয় প্রকল্পের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার যেহেতু বেশি, সবাই এখানেই বিনিয়োগ করছে।”
সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার এখন জাতীয় পরিচয়পত্র এবং টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করেছে। তাছাড়া ব্যাংক হিসাব ছাড়া সঞ্চয়পত্র কেনা যায় না।
এখন আর কেউ ভুয়া নামে বা একই ব্যক্তি বিভিন্ন নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারে না বলেই সঞ্চয়পত্রের এত বিক্রি অস্বাভাবিক ঠেকছে গবেষকদের কাছে।
ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার কম এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে গত কয়েক বছর ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল সঞ্চয়পত্র বিক্রি। এতে সরকারের ঋণের বোঝাও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছিল।
বিক্রির চাপ কমাতে গত বছরের ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার উপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একইসঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে কমতে শুরু করে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি।
কিন্তু এখন তা আবার বাড়ছে।