আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ১৭ হাজার ডলারে নেওয়ার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে সরকার।
‘বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১’ শীর্ষক এই পরিকল্পনায় ওই সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত এবং দারিদ্র্য হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যও ঠিক করা হয়েছে।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি)
সভায় জাতীয় এই উন্নয়ন দলিল অনুমোদিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
ঢাকার শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ওই সভার পর তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই দলিলের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র সুসংহত করা।”
যে দলিল এনইসি সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছিল, তাতে কিছু তথ্যগত অসঙ্গতি ছিল জানিয়ে মান্নান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আরও হালনাগাদ তথ্যের ব্যবহার চেয়ে ২০১৯ সালের তথ্য সন্নিবেশ করতে বলেছেন।
“আগামী এক মাসের মধ্যে সকল খাতের মন্ত্রী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে সর্বশেষ তথ্য নিশ্চিত করার পর এই দলিল ছাপাখানায় পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।”
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এই দলিল প্রণয়ন করেন।
বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া দলিলে দেখা যায়, ২০২০ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ শতাংশ, ২০৪১ সালে এই প্রবৃদ্ধি নিয়ে যাওয়া হবে ৯ দশমিক ৯ শতাংশে।
ওই সময়ে মাথাপিছু আয় হবে ১৬ হাজার ৯৯৪ ডলার, যা বর্তমানে ২ হাজার ডলারের কাছাকাছি।
দলিলে ২০২০ সালের বেসরকারি (পিপিপিসহ) বিনিয়োগ জিডিপির ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ২০৪১ সালে জিডিপির ৩৮ শতাংশে এবং সরকারি বিনিয়োগ ৮ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। আর সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মাত্র জিডিপি‘র ৩ শতাংশ। মোট বিনিয়োগ হবে জিডিপি‘র ৪৬ দশমিক ৯ শতাংশ।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “পরিকল্পনা যাই হোক না কেন, তা নিজস্ব সম্পদনির্ভর হবে। আগে আমাদের অর্থনীতি বৈদেশিক সহায়তা নির্ভর ছিল। কিন্তু এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।”
দলিলে ২০৪১ সালে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ ধরা হয়েছে, মোট জাতীয় সঞ্চয় হবে ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ, মোট দেশজ সঞ্চয় ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ।
বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে রাজস্ব আয় করে মাত্র জিডিপির ১২ শতাংশ, সে আয় ২০৪১ সালে ২১ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যও নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে এই দলিল নিয়ে আলোচনায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে আলোচনার সময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্লক চেইন, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, আইওটি ইত্যাদি বিষয়গুলো যুক্ত করার পরামর্শ দেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “দলিলের আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগামী এক মাসের মধ্যে যেসব পরিবর্তন করা হবে, তার মধ্যে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি, ভারী শিল্পের পাশাপাশি চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে আরও স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার কথা বলেছেন।”
তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়িয়ে নারীদের বেশি করে ভাতার আওতা বাড়ানোর মাধ্যমে ধনী-দরিদ্র্যের বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
জিইডির সদস্য অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে বৈষম্য কমিয়ে আনা, ধারাবাহিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্য নিরসন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা, লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষা, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা, টেকসই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা।