গলি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন এক যুবক। সামনে থেকে কয়েক জনকে ছুটে আসতে দেখে পালানোর চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু দু’পাশ থেকে দশ-বারোজন এসে তাকে ঘিরে ধরে। শুরু করে মারধর। এক পর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ওই যুবক। ওই অবস্থায় একজন তার পা ধরে থাকেন। তিন-চারজন মিলে ক্রিকেট স্ট্যাম্প ও লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন তাকে। বেধড়ক মারধরে একপর্যায়ে নিথর হয়ে পড়ে তার দেহ। এরপর তাকে গলির রাস্তায় ফেলে চলে যায় তারা। মারধর করার সময় ওই দশ-বারো জনের কারো কারো হাতে ছিল ধারালো অস্ত্র।
গত রোববার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে নগরের আকবরশাহ থানার বিশ্ব কলোনি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এমন মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধরের একটি ভিডিও এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত দুই যুবকসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- মো. সাজু, মাসুদ, মিরাজ, বেলাল ও তারেক। তাদের মধ্যে সাজু ঘটনাস্থলে কিরিচ নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। তার কাছ থেকে কিরিচটি উদ্ধার করা হয়েছে।
হামলার শিকার বিশ্ব কলোনির এন ব্লকের বাসিন্দা যুবলীগ কর্মী মো. মহসিন। তিনি উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার মোর্শেদ কচির অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তার অভিযোগ, একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের অনুসারীরা তার ওপর এ হামলা চালিয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জহুরুল আলম জসিম।
আকবরশাহ থানার ওসি মো. জসীম উদ্দিন বলেন, গত ২৭ জুন জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হন মহসিন। তার বিরুদ্ধে মারামারির অভিযোগে তিনটি মামলা রয়েছে। রোববার প্রতিপক্ষের হাতে মারধরের শিকার হন তিনি। তাকে মারধরের ভিডিও ফুটেজটি সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে সরাসরি জড়িত দুইজনসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। কি কারণে মহসিনকে এমন মারধর করা হয়েছে সেটা এখনো নিশ্চিত নই। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের পর বিস্তারিত জানা যাবে।
তবে স্থানীয় সূত্র জানায়, স্থানীয় কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ও সরওয়ার মোর্শেদ কচির অনুসারীদের মধ্যে নিয়মিত মারামারি ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় দুই গ্রুপের অনুসারীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। গত ২৯ জুন জসিমের অনুসারী বেলাল উদ্দিন জুয়েলকে মারধর করে সরওয়ার মোর্শেদ কচির অনুসারীরা। এর জের ধরে কচির অনুসারী মো. মহসিনকে এমন বেধড়ক পেটানো হয়েছে।
উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার মোর্শেদ কচি বলেন, জহুরুল আলম জসিমের নির্দেশে তার অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছে। তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় মহসিনকে পিটিয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম বলেন, আমার কোনো গ্রুপ নেই। ওই ঘটনার বিষয়টি জানতামও না। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। তবে পরে শুনেছি যাকে মারধর করা হয়েছে সে ১৮ মামলার আসামি। তিনদিন আগে জেল থেকে বের হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মো. আলাউদ্দিন বলেন, গত রোববার সন্ধ্যার দিকে আকবরশাহ থানা এলাকা থেকে মো. মহসিন নামে একযুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। প্রথমে তাকে হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে হাসপাতালের নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।