মালয়েশিয়ার নতুন রাজা নির্বাচিত হয়েছেন পাহাং রাজ্যের রাজা সুলতান আবদুল্লাহ। রুশ সুন্দরীকে বিয়ের পর সুলতান মুহাম্মদ পঞ্চম সিংহাসন ত্যাগ করলে বৃহস্পতিবার দেশটির শাসক পরিষদ (কাউন্সিল অব রুলারস) তাকে নতুন রাজা হিসেবে বেছে নেয়।
মালয়েশিয়ার রাজার আনুষ্ঠানিক পদবি ‘ইয়াং দি-পারতুয়ান আগং’। রাজার পদটি একেবারেই আনুষ্ঠানিক এবং তিনি নিয়মিত সরকার পরিচালনার কোনো কার্যক্রমে অংশ নেন না।
দেশটির সংবিধানে রাজতন্ত্রের পদ্ধতিটি একেবারেই ভিন্ন ধরনের। দেশটির নয়টি রাজ্যের মধ্যে প্রতি পাঁচ বছর পর পর ক্রমানুসারে রাজা নির্বাচিত হন।
‘ইয়াং দি-পারতুয়ান আগং’ প্রথাটি শুরু হয় ১৯৫৭ সালে ফেডারেশন অব মালয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভের পর। দেশটিতে মোট ১২ রাজ্য। প্রতিটি রাজ্যের একটি করে আসন আছে কনফারেন্স অব রুলারস-এ।
তবে এর মধ্যে নয়টি রাজ্যে প্রথাগত মালয় শাসক আছে। প্রতি পাঁচ বছর পর এ নয়টি রাজ্যের সুলতানরা ভোট দিয়ে নিজেদের মধ্যে একজনকে রাজা নির্বাচন করেন।
যে নয়জন ভোট দিতে পারবেন তাদের প্রত্যেককে একটি করে ব্যালট পেপার দেয়া হয়। ব্যালট পেপারে একটিই নাম থাকে। কারণ পরবর্তী রাজা কোন রাজ্য থেকে হবেন সেটি সিরিয়াল অনুযায়ী আগেই সবার জানা।
তবে সুলতানরা সর্বসম্মতভাবে ঠিক করেন, রাজা হতে যাওয়া সুলতান এই কাজের জন্য যোগ্য কি-না।
রাজা হতে হলে পাঁচটি ভোট অবশ্যই পেতে হবে। তবে যদি কোনো কারণে সেটি না হয় বা সিরিয়ালে থাকা সুলতান দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান, তাহলে পুরো প্রক্রিয়াটি পুনরায় হবে। সেক্ষেত্রে ব্যালটে এর পরের রাজ্যের সুলতানের নাম থাকবে।
তবে কোন সুলতান কিভাবে ভোট দিয়েছেন, তা যাতে গোপন থাকে সেটি নিশ্চিত করতে নয় রাজ্যের নয় শাসককে সংখ্যাবিহীন ব্যালট পেপার দেয়া হয়। আর সাথে দেয়া হয় একই রকমের কলম ও কালি।
রাজার ক্ষমতা: মালয়েশিয়ার রাজার পদটি আনুষ্ঠানিক এবং দেশটিতে ক্ষমতা মূলত পার্লামেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর হাতে। কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়ার দায়িত্ব তার। যেমন: প্রধানমন্ত্রী। তবে তিনি নিজেই মালয়েশিয়ায় ইসলাম ধর্মের নেতা এবং সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ।
আবার ক্ষমা মঞ্জুর করার ক্ষমতা আছে তার। সাবেক বিরোধী নেতা আনোয়ার ইব্রাহীমকে যেমন গত বছর নির্বাচনের পর পূর্ববর্তী রাজা ক্ষমা করেছিলেন। আনোয়ার এ ক্ষমার কারণেই আদালতের দেয়া সাজা থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন।
‘ইয়াং দি-পারতুয়ান আগং’ অনেক মর্যাদার বিষয়- বিশেষ করে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয় মুসলমানদের মধ্যে। যে কারণে রাজা মালয় ও ইসলামী প্রথার মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট থাকেন।
রাজার সমালোচনা করলে জেলের ঝুঁকি আছে। সম্প্রতি রাজার পদত্যাগের পর অনলাইনে নজরদারির মাধ্যমে রাজার সমালোচনা হয়েছে এমন কয়েকজনকে চিহ্নিত করে নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।