আঁটসাঁট বোলিংয়ে লক্ষ্য খুব একটা বড় হতে দেননি বোলাররা। উইকেটে বোলারদের জন্য বেশ সহায়তা থাকায় কাজটা এরপরও সহজ ছিল না। অসাধারণ এক ইনিংসে সেটা সহজেই সারলেন মাহমুদুল হাসান। এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরিতে নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছেছে বাংলাদেশ।
পচেফস্ট্রুমে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে ৬ উইকেটে জেতে বাংলাদেশ। ২১২ রানের লক্ষ্য ছাড়িয়ে গেছে ৩৫ বল বাকি থাকতে।
টানা নবম জয় পেল বাংলাদেশ। যুব ওয়ানডেতে এটাই তাদের সেরা ধারাবাহিক ফল। ২০০৫ সালে টানা আট ম্যাচ জিতেছিল তারা।
এর আগে একবারই সেমি-ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। ২০১৬ আসরে দেশের মাটিতে হয়েছিল তৃতীয়। আগামী রোববার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ভারত।
তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে নিউ জিল্যান্ড।
১০০ রানের দারুণ পরিণত এক ইনিংসে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন মাহমুদুল। যুব ওয়ানডেতে এটি তার চতুর্থ সেঞ্চুরি। ডানহাতি এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের ১২৭ বলের ইনিংস সাজানো ১৩টি চারে।
নিউ জিল্যান্ডকে ২১১ রানে থামানোয় দারুণ অবদান শরিফুল ইসলামের। ৪৫ রানে ৩ উইকেট নেন বাঁহাতি এই পেসার। দুটি করে উইকেট নেন শামীম হোসেন ও হাসান মুরাদ।
সেনওয়েস পার্কে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি নিউ জিল্যান্ডের। অফ স্পিনার শামীমের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করার চেষ্টায় স্লিপে তানজিদ হাসানের হাতে ধরা পড়েন রিস মারিউ।
প্রথম দুটি ওভার মেডেন নেন শরিফুল। আক্রমণে এসে রকিবুল হাসান শুরুতে নেন তিনটি মেডেন ওভার। রানের জন্য রীতিমত সংগ্রাম করতে হচ্ছিল কিউইদের।ওপেনার অলি হোয়াইটকে কট বিহাইন্ড করে থামান রকিবুল। শামীমের বলে ফার্গাস লেলম্যানের দুর্দান্ত এক ক্যাচ মুঠোয় জমান মাহমুদুল। দারুণ এক ডেলিভারিতে জেসি ট্যাশকফকে বোল্ড করে দেন বাঁহাতি স্পিনার মুরাদ।
৭৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া নিউ জিল্যান্ডকে টানেন নিকোলাস লিডস্টোন ও বেকহ্যাম হুইলার-গ্রিনল। ৯০ বল স্থায়ী তাদের ৬৭ রানের জুটিতে লড়াইয়ের পুঁজি গড়ার পথে এগিয়ে যায় কিউইরা।
৪১তম ওভারে আক্রমণে ফিরে লিডস্টোনকে এলবিডব্লিউ করে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা জুটি ভাঙেন শরিফুল। পরের ওভারে কুইন সানডেকে বোল্ড করে দেন মুরাদ।
লোয়ার অর্ডারে ক্রিস্টিয়ান ক্লার্ক ও জোয়ি ফিল্ডকে ডানা মেলতে দেননি শরিফুল। তবে হুইলার-গ্রিনলের দৃঢ়তায় শেষ ১০ ওভারে ৭২ রান তুলে নেয় নিউ জিল্যান্ড।
রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। শরীরের বেশ কাছের বল পয়েন্ট দিয়ে খেলতে গিয়ে কাভারে ধরা পড়েন তানজিদ। ডেভিড হ্যানককের বল বাড়তি লাফিয়ে পারভেজ হোসেনের গ্লাভস ছুঁয়ে জমা পড়ে কিপারের গ্লাভসে।
৩২ রানে দুই ওপেনারকে হারানো বাংলাদেশকে টানেন মাহমুদুল ও তৌহিদ হৃদয়। ক্রিজে গিয়েই রানের চাকা সচল করায় মনোযোগ দেন হৃদয়। সাবধানী ব্যাটিংয়ে তাকে সঙ্গ দেন মাহমুদুল। ধীরে ধীরে জমে ওঠে জুটি।
লেগ স্পিনার আদিত্য অশোককে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হয়ে হৃদয়ের বিদায়ে ভাঙে ৬৮ রানের জুটি। হৃদয় চারটি চারে ৪৭ বলে করেন ৪০।এরপর কিছুটা কমে রানের গতি। ধীরে ধীরে শট খেলতে শুরু করেন মাহমুদুল ও শাহাদাত হোসেন। কিউইদের স্পিন-পেস কিছুই আর পরে পাত্তা পায়নি তাদের সামনে।
৭৭ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া মাহমুদুল ১২৬ বলে পৌঁছান সেঞ্চুরিতে। সুইপ করে বাউন্ডারি মেরে তিন অঙ্ক ছোঁয়ার সঙ্গে জুটির রানও নিয়ে যান একশতে। পরের বলে ট্যাশকফকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে থামেন মাহমুদুল। ভাঙে ১০১ রানের জুটি। ততক্ষণে জয়ের দুয়ারে চলে গেছে বাংলাদেশ।
বেশি সময় নেননি শাহাদাত ও আকবর আলী। চারটি চারে ৫১ বলে ৪০ রানে অপরাজিত থাকেন শাহাদাত। চার মেরে বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো কোনো আইসিসি ইভেন্টের ফাইনালে নিয়ে যান অধিনায়ক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:নিউ জিল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দল: ৫০ ওভারে ২১১/৮ (মারিউ ১, হোয়াইট ১৮, লেলম্যান ২৪, লিডস্টোন ৪৪, ট্যাশকফ ১০, হুইলার-গ্রিনল ৭৫*, সানডে ১, ক্লার্ক ৭, ফিল্ড ১২, অশোক ৫*; শরিফুল ১০-২-৪৫-৩, শামীম ৬-১-৩১-২, রকিবুল ১০-৩-৩৫-১, তানজিম ১০-১-৪৪-০, মুরাদ ১০-১-৩৪-২, হৃদয় ৪-০-১৮-০)
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল: ৪৪.১ ওভারে ২১৫/৪ (পারভেজ ১৪, তানজিদ ৩, মাহমুদুল ১০০, হৃদয় ৪০, শাহাদাত ৪০*, শামীম ৫*; ফিল্ড ৬-০-২৮-০, ক্লার্ক ৯-০-৩৭-১, হ্যানকক ৭-০-৩১-১, অশোক ১০-০-৪৪-১, ট্যাশকফ ১০-৫৭-১-০, হুইলার-গ্রিনল ২.১-০-১৩-০)
ফল: বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মাহমুদুল হাসান