কক্সবাজারের চকরিয়ায় গরু চুরির সন্দেহে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের চারজনকে রশিতে বেঁধে প্রকাশ্যে ঘোরানো হয়েছে।
এক পর্যায়ে তাদের হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নেওয়া হলেও এই ঘটনায় এই ইউপি চেয়ারম্যান জড়িত নন বলে দাবি করছেন।
শুক্রবার হারবাং ইউনিয়নের পঁহরচাঁদা এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।
শনিবার এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।
এই ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে।
একই ঘটনায় স্থানীয় পঁহরচাঁদার মাহমুদুল হক বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে গরু চুরির অভিযোগে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। যাদের মধ্যে তিনজন নারী ও দুই জন পুরুষ। পুরুষ আসামিরা হলেন চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাটের আবুল কালামের ছেলে আরমান ও পেকুয়া উপজেলার মোহাম্মদ ছুট্টু।
এই মামলায় তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, দুই-তিন জন লোক দুই নারীকে কোমরে রশি বেঁধে এলাকায় ঘোরাচ্ছে। এক পর্যায়ে তাদের হারবাং ইউনিয়ন পরিষদে নেওয়া হয়। ভিডিওতে দুই নারীর সঙ্গে আরও এক নারী ও দুই পুরুষকেও দেখা যায়। রশি বাঁধা অবস্থায় থাকা দুই নারীকে কান্না করতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, “এক পরিবারের তিন নারী সদস্যসহ ‘গরু চোর সিন্ডিকেটের’ পাঁচ সদস্যকে স্থানীয় জনতা আটক করেছে বলে জানতে পারি। পরে পুলিশ পাঠিয়ে তিন নারী ও দুই পুরুষকে স্থানীয় ইউপি কার্যালয় থেকে উদ্ধার করা হয়।
“পরে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আদালতে পাঠানো হলে তাদের জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।”
এদের কাছ থেকে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা, গরুর বাচুর ও একটি অজ্ঞান করার স্প্রে মেশিন উদ্ধার করা হয় বলে পরিদর্শক মিজানুর জানান।
হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মিরানুল ইসলাম মিরান সাংবাদিকদের বলেন, “এই আসামিদের আমি পরিষদে এনে মেরেছি বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সঠিক না। ওইদিন [শুক্রবার] বিকাল ৩টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে এলাকায় ফিরে আসি। পরে গরু চোর আটকের ঘটনাটি জানতে পারি। ঘটনাটি চকরিয়া থানা পুলিশ ও ইউএনকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছি।”
তিনি আরো বলেন, “সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন তাই আমার বিরোধী পক্ষ আমাকে ফাঁসানোর জন্য নানা ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে।”
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, “ঘটনার দিন বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জেনেছি। আমি তখন গরু চোরদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছি।”
তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। এতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শ্রাবস্তী রায়কে প্রধান করা হয়েছে। এই কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন চকরিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও একজন হারবাং ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসারকে দেওয়া হয়েছে।
“বিষয়টি আমি নিজেই খতিয়ে দেখছি। ওই নারী-পুরুষ যদি মনে করে তাদের অপমান বা হয়রানি করা হয়েছে তাহলে তাদের অভিযোগও আমলে নেওয়া হবে।”