ঢাকার মিরপুরে যে বাড়িতে এক বৃদ্ধা ও তার তরুণী গৃহকর্মী খুন হয়েছেন, সেখানে যৌন ব্যবসা চলত দাবি করে পুলিশ জানিয়েছে, খদ্দের হিসেবে যাওয়া দুই ব্যক্তিই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
ওই দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এক সংবাদ সম্মেলনে এই জোড়া খুনের আদ্যোপান্ত তুলে ধরে।
মঙ্গলবার রাতে মিরপুর ২ নম্বর সেকশনের ‘এ’ ব্লকের ২ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলা থেকে রহিমা বেগম (৬০) ও সুমি আক্তারের (২০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
রহিমা ওই বাড়িতে একাই থাকতেন, আর সুমী তার একদিন আগেই ওই বাড়িতে কাজ নেন বলে পুলিশ জানিয়েছিল।
নারায়ণগঞ্জে থাকা রহিমার মেয়ে মামলা করার পর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্তে নেমে বুধবার দুজনকে পুরান ঢাকার সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তারের পরদিন সংবাদ সম্মেলনে আসে।
গ্রেপ্তার দুজনই পেশায় রাজমিস্ত্রি, একজনের নাম ইউসুফ খান (১৯); অন্যজন অপ্রাপ্তবয়স্ক।
তারা দুজন ওই দুই নারীকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন।
গ্রেপ্তার দুজনের বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “যে রাতে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়, তার আগের রাত ১১টার দিকে এই দুজন অসামাজিক কার্যকলাপের উদ্দেশ্যে ওই বাসায় যায়। দুজনের মধ্যে একজন আগেই থেকেই ওই বাসায় যেত এবং ওই ভবনের দারোয়ান তাদেরকে ঢুকতে দেয়।”
পুলিশ কর্মকর্তা বাতেন বলেন, রহিমা তার বাড়িতে যৌন ব্যবসা চালাতেন এবং একাজে তাকে মদদ জোগাতেন বাবুল নামে এক ব্যক্তি।
ইউসুফসহ দুজন সেদিন ওই বাড়িতে গেলেও তাদের হাতে টাকা কম ছিল বলে তারা পুলিশকে জানিয়েছেন।
বাতেন বলেন, “এক রাত যাপনের জন্য জনপ্রতি তিন হাজার টাকা নিত রহিমা। কিন্তু দুজনের কাছে মোট ছিল সাড়ে তিন হাজার টাকা। তাই ওই দুজন যখন কম টাকা নিতে বলছিল, তখন রহিমা বাবুলের ভয় দেখিয়েছিল।
“তখন তারা দুজন সিদ্ধান্ত নেয়, টাকা কম থাকায় একজন সুমির সঙ্গে রাতযাপন করবে। অন্যজন রাতে বারান্দায় ছিল। কিন্তু ভোরের দিকে তাদের মনে ভয় ঢুকে যায় যে, যদি সকালে বাবুল আসে এবং তাদের মেরে ফেলে।”
ভয় থেকে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল বলে দুজন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা বাতেন।
তিনি বলেন, “তখন তারা সুমিকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় বুঝতে পারে যে, চাবি রহিমা বেগমের কক্ষে। তখন দুজন রহিমাকে ফোন করে ঘুম থেকে তোলে। পরে রহিমার সঙ্গে তারা ঝগড়ায় জড়িয়ে তাকেও শ্বাসরোধে হত্যা করে।”
তবে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, “এমনও হতে পারে যে একজনের কথা বলে দুজন সুমির কাছে যাওয়ায় সুমি হয়ত চিৎকার বা ঝামেলা করেছে। তাই তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে। রহিমা বিষয়টি জেনে যাওয়ায় তাকেও হত্যা করে।”
গ্রেপ্তার দুজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার বাতেন বলেন, “পুলিশ হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও আরও তথ্য জানা যাবে।”
তবে পুলিশ বিকালে ইউসুফসহ দুজনকে আদালতে পাঠালে তারা হত্যাকাণ্ড ঘটানোর কথা স্বীকার করে হাকিমের কাছে জবানবন্দি দেন।
পুলিশকে তারা যা বলেছিলেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও তা বলেন বলে জানিয়েছেন আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই আসাদুজ্জামান।
তারা বলেছেন, ওই বাসায় সুমিকে দিয়ে যৌন ব্যবসা করাতেন রহিমা। পুরো টাকা না দেওয়ায় রহিমা তাদের ভয় দেখালে তার প্রতিশোধ নিতে হত্যাকাণ্ড ঘটান তারা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম খান আসামিদের ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নিয়ে গিয়েছিলেন।
এরপর খাসকামরায় বসে মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান দুই আসামির জবানবন্দি নেওয়ার পর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।