নানা আয়োজনে জিয়াউর রহমানের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো।
বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও জিয়ার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন দলের নেতাকর্মীরা।
সকাল সোয়া ১১টায় জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কর্মীদের নিয়ে শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সেখানে মোনাজাত করেন তারা।
এরপর সমাধি প্রাঙ্গণে উলামা দলের উদ্যোগে মিলাদে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর একদল সদস্যের অভ্যুত্থানে নিহত হন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
মৃত্যুবার্ষিকীতে আগে খালেদা জিয়াই দলের প্রতিষ্ঠার কবরে গিয়ে পুষ্পমাল্য অর্পণ করতেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতি মামলায় সাজা নিয়ে কারাগারে যাওয়ার পর দলের মহাসচিব স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন।
জিয়ার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, আবদুল মঈন খান, জ্যেষ্ঠ নেতা শাহজাহান ওমর, এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, আমানউল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, সিরাজউদ্দিন আহমেদ, মাহবুবউদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শ্যামা ওবায়েদ, দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী, শামীমুর রহমান শামীম, শহিদুল ইসলাম বাবুল, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, সেলিম রেজা হাবিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতারোও ছিলেন।
‘দেশে দুঃশাসনের রাজত্ব চলছে’
দলের প্রতিষ্ঠাকার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জিয়ার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “আজকে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। সমগ্র দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে, মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দেশে একটা দুঃশাসনের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।”তিনি বলেন, “শাহাদাৎ বার্ষিকীর এই দিনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দর্শন ও আদর্শকে সামনে নিয়ে তাকে অনুসরণ করে আমরা শপথ গ্রহণ করব যে, আমরা দেশনেত্রীকে মুক্ত করব এবং গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করব।”
মওদুদ আহমেদ বলেন, “হাজার চেষ্টা করলেও শহীদ জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন শহীদ জিয়া মানুষ স্মরণ করবে। তার অনেকগুলো তার মধ্যে একটি প্রধান কারণ হল- একদলীয় শাসনের প্রেক্ষাপটে তিনি ক্ষমতায় এসে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।”
“সেই আন্দোলনে এখনও আমরা আছি। আমাদের নেত্রী জেলখানায় আছেন। কিন্তু বিএনপি এখনও সজাগ, এখনও সচেষ্ট ও এখনও শক্তিশালী একটি সংগঠন। আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে যাবো যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফিরে না আসবে, আইনের শাসন ফিরে না আসবে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরে না আসবে ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল মানুষের সাথে থাকবে এবং আন্দোলনে করে যাবে।”
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে জিয়ার কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
জিয়ার রহমানের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিএনপি সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব মিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়।
সকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় দুঃস্থদের জন্য ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প খোলা হয়।জিয়ার রহমানের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি গত ২৫ মে থেকে দশ দিনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি শুরু করে। কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনগুলো পোস্টার প্রকাশ করেছে। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছে বিশেষ ক্রোড়পত্র।
মহানগর বিএনপির বস্ত্র ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ
জিয়ার কবরের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দুপুরে বিএনপি মহাসচিব তেজগাঁওয়ের আরজত পাড়ায় স্থানীয় বিএনপির
আয়োজনে দুঃস্থদের মধ্যে ইফতার সামগ্রি বিতরণ ও দোয়ায় অংশ নেন।
এছাড়া মহানগর দক্ষিণ পুরান ঢাকার নয়া বাজারে মহানগর কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল ও ইফতার সামগ্রি বিতরণ হবে বিকালে। এতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।