বাংলাদেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৯ জন শনাক্ত মৃত্যু ২
চীনের উহান রাজ্য থেকে করোনাভাইরাস এখন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ ছাড়িয়েছে। ৬১ হাজারের ওপরে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে এখনও এই ভাইরাসের সংক্রমণ এতটা দেখা যাচ্ছে না। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশে পরীক্ষার হার কম। এ কারণে সংক্রমণের হারও কম। গত দু’দিনে পরীক্ষার পরিধি বৃদ্ধির পর আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। এই পরিধি বাড়ানো হলে আরও আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হবে। পরীক্ষার মাধ্যমে যত বেশি আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত করা যাবে, তত বেশি পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সার্বক্ষণিক হালনাগাদ তথ্য দিচ্ছে ওয়ার্ল্ডওমিটার নামে একটি ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইটের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুহার করোনার হানায় লণ্ডভণ্ড ইতালির প্রায় কাছাকাছি। এমনকি মৃত্যুতে এগিয়ে থাকা যুক্তরাজ্য, স্পেন ও ফ্রান্সের তুলনায় বাংলাদেশে প্রাণহানির হার বেশি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে মৃত্যুহারের দিক দিয়ে বাংলাদেশের আশপাশেও কেউ নেই। অন্যদিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশ যোজন যোজন পিছিয়ে রয়েছে।
এদিকে, পরীক্ষার পরিধি বাড়ানোর পর এক দিনেই নতুন করে ৯ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া গত চব্বিশ ঘণ্টায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ জনে পৌঁছাল।
মৃতের সংখ্যা বেড়ে আটজনে পৌঁছাল। গত ৮ মার্চ দেশে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর এটিই এক দিনে আক্রান্তের সর্বোচ্চ সংখ্যা। তবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আরও চারজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে মোট ৩০ জন বাড়ি ফিরলেন। গতকাল শনিবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে নতুন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা তুলে ধরেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
কোন দেশে কত পরীক্ষা :পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, চীনে করোনা সংক্রমণের পর তিন মাস ধরে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা গণমাধ্যমের সামনে উপস্থিত হয়ে বারবার বলেছেন, স্বাস্থ্য বিভাগ সব দিক দিয়ে প্রস্তুত আছে। এখন তাদের কাছে জানতে চাওয়া প্রয়োজন, করোনা প্রতিরোধে তারা কী কী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এই রোগ প্রতিরোধে মূলমন্ত্র পরীক্ষা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বারবার সে কথা বলে আসছে। অথচ সেই কাজটি তারা করতে পারল না। তাহলে কী প্রস্তুতি তারা নিয়েছিলেন? দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি বেশি সংখ্যক মানুষকে পরীক্ষার মাধ্যমে এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পেরেছে। যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত বেশি হলেও মৃত্যুহার কম। কারণ এসব দেশ পরীক্ষার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করে তাকে আইসোলেশন এবং সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইন করে ভাইরাসের প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে। অথচ আমাদের দেশে সেটি হচ্ছে না। পরীক্ষা না করলে আক্রান্ত কীভাবে শনাক্ত হবে? এতে করে ঝুঁকি বাড়ছে। পরীক্ষার পরিধি আরও বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।
বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ গত ২১ জানুয়ারি থেকে এ রোগ মোকাবিলায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তুতি শুরু করে। অথচ ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, গতকাল শনিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখে ১৩ জন মানুষকে পরীক্ষার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। শতকরা হিসাবে এটি ০.০০১৩ শতাংশ। এ সময় ২০৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতিদিন গড়ে ২৭ দশমিক ৮১ জনকে পরীক্ষার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা করা ব্যক্তিদের মধ্যে ৭০ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ, পরীক্ষার আওতায় আসা ব্যক্তিদের মধ্যে আক্রান্তের হার ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুহার ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ১৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৬০৭ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৪০৬ জনের। যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুহার ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ইতালিতে ৬ লাখ ১৯ হাজার ৮৪৯ জনের পরীক্ষা করে ১ লাখ ১৯ হাজার ৮২৭ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করে ১৪ হাজার ৬৮১ জন। ইতালিতে মৃত্যুহার ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। স্পেনে ৩ লাখ ৫৫ হাজার মানুষের পরীক্ষা করে সংক্রমণ পাওয়া যায় ১ লাখ ২৪ হাজার ৭৩৬ জনের শরীরে। তাদের মধ্যে ১১ হাজার ৭৪৪ জন মৃত্যুবরণ করেন। স্পেনে মৃত্যুহার ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। ফ্রান্সে ২ লাখ ২৪ হাজার ২৫৪ জনের পরীক্ষা করে ৮২ হাজার ১৬৫ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে ৬ হাজার ৫০৭ জন মারা যান। ফ্রান্সে মৃত্যুহার ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। যুক্তরাজ্যে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৮৪ জনের পরীক্ষা করে ৩৮ হাজার ১৬৮ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৬০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাজ্যে মৃত্যুহার ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
ওয়ার্ল্ডওমিটারে চীনের মোট পরীক্ষার কোনো হিসাব নেই। শুধু ৮১ হাজার ৬৩৯ জনের আক্রান্ত এবং ৩ হাজার ৩২৬ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। চীনে মৃত্যুহার ৪ দশমিক ০৭ শতাংশ। ইরানে ৮০ হাজার মানুষের পরীক্ষা করে ৫৫ হাজার ৭৪৩ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৪৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইরানে মৃত্যুহার ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৩২ জনের পরীক্ষা করে ১০ হাজার ১৫৬ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৭৭ জন। কোরিয়ায় মৃত্যুহার ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। অন্যদিকে জার্মানিতে ৯ লাখ ১৮ হাজার ৪৬০ জনের পরীক্ষা করে ৯১ হাজার ৫৮৯ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ২৯৩ জন। জার্মানিতে মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪১ শতাংশ।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ১ লাখ ১৬ হাজার ৬০৮ জনের পরীক্ষা করে ৩ হাজার ৮২ জনের মধ্যে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারতে মৃত্যুহার ২ দশমিক ৭ শতাংশ। পাকিস্তানে ৩০ হাজার ৩০৮ জনের পরীক্ষা করে ২ হাজার ৭০৮ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে মৃতুবরণ করেছেন ৪১ জন। পাকিস্তানে মৃত্যুহার ১ দশমিক ৫১ শতাংশ। আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কায় পরীক্ষার কোনো তথ্য নেই। তবে দেশ দুটিতে আক্রান্তদের মধ্যে যথাক্রমে ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ মৃত্যুবরণ করেছেন।
এ চিত্র বিশ্নেষণ করলে দেখা যায়, দেশে পরীক্ষার হার কম। এ কারণে সংক্রমণের হারও কম। কিন্তু মৃত্যুহার অনেক বেশি। যুক্তরাজ্য, স্পেন ও ফ্রান্সের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুহার বেশি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পিছিয়ে থাকলেও বাংলাদেশে মৃত্যুহার চীন, ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার আওতা ইতোমধ্যে বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ১৪টি স্থানে পরীক্ষা করা হচ্ছে। চলতি মাসের মধ্যেই এটি দ্বিগুণ করা হবে। প্রয়োজন হলে পরীক্ষার আওতা আরও বাড়ানো হবে। চিকিৎসা সরঞ্জামাদির কোনো ঘাটতি নেই। প্রতিদিনই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে চিকিৎসা সরঞ্জামাদি আসছে। সুতরাং সবার প্রতি আহ্বান থাকবে, আপনারা ঘরে থাকুন। নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন। তাহলেই আমরা এই ভাইরাসকে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবো।
শঙ্কা কাটেনি বাংলাদেশের : যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের মতো পরিস্থিতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং বাংলাদেশে হয়নি বলে ধারণা করছেন অনেকে। এ থেকে অনেকে কোনো প্রয়োজন ছাড়াই বাইরে বের হচ্ছেন অথবা অফিস, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিছুদিনের মধ্যেই খুলে দেওয়ার কথা ভাবছেন। তবে বিভিন্ন দেশের করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে তারা আঁতকে উঠবেন।
যেমন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। এক মাস পর ১ ফেব্রুয়ারি এই সংখ্যা ৭ জনে দাঁড়ায়। গত ১ মার্চে এই সংখ্যা বেড়ে ৭৪ জনে দাঁড়ায়। ১ এপ্রিল পর্যন্ত শনাক্ত হয় এক লাখ ৯০ হাজার রোগী।
ইতালিতে গত ৩১ জানুয়ারি ২ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর ২৯ ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ১০০ জনে। আর ৩১ মার্চ করোনা পজিটিভ মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ পাঁচ হাজার ৮০০ জনে। ১ এপ্রিল বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ১০ হাজার ৫৭৪ জনে। স্পেনে গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ১ মার্চ সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪ জনে। আর ৩১ মার্চ তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৬ হাজারে। যুক্তরাজ্যে গত ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যে মাত্র ২ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়, যা ১ মার্চ দাঁড়ায় ৩৬ জনে। আর ৩১ মার্চ যুক্তরাজ্যে শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ হাজার ৫০০ জনে।
জার্মানিতে গত ২৭ জানুয়ারি প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারি শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে হয় ৪৬ জন। ২৭ মার্চ এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫১ হাজারে। আর ৩১ মার্চ দেশটিতে মোট ৭১ হাজার ৮০০ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়। ফ্রান্সে গত ২৪ জানুয়ারি মাত্র ২ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি ১২ জনের শরীরে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ২৪ মার্চ ২২ হাজার ৬০০ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া যায়। আর ৩১ মার্চ শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ হাজার ৮০০ জনে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গত ৩০ জানুয়ারি প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর ২৯ ফেব্রুয়ারি শনাক্ত হওয়া রোগী বেড়ে দাঁড়ায় ৩ জনে। আর ৩১ মার্চ সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৪০০ জনে। দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তানে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ২৬ মার্চ সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ২০০ জন। আর ৩১ মার্চ এই সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৯০০ জনে দাঁড়ায়। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম তিনজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়। ২৭ দিন পর আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ জনে পৌঁছেছে। মৃত্যু হয়েছে আটজনের।
এ চিত্র বিশ্নেষণ করলে দেখা যায়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও শুরুতে দু-একজনের মধ্যে সংক্রমণ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আক্রান্তের সংখ্যা দেশজুড়ে বিস্তৃতি ঘটেছে। অর্থাৎ প্রথমে দু-একজনের মাধ্যমে সংক্রমণ শুরু হয়ে পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী হয়ে সর্বত্রই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রমণ শুরুর পর এক মাসের মধ্যে কোনো দেশেই বাংলাদেশের মতো আক্রান্তের সংখ্যা এত হয়নি। এসব দেশে দুই মাস পর করোনা মহামারি রূপ নিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব সমকালকে বলেন, বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি বিশ্নেষণ করলে দেখা যায়, প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার দুই মাস পর মহামারি রূপ নিয়েছে। সুতরাং আমাদের সতর্ক হতে হবে। এই ভাইরাসকে মোকাবিলা করতে হলে ঘরে থাকতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। সাবান দিয়ে বারবার হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। আর সরকারকে পরীক্ষার আওতা বাড়াতে হবে। যত বেশি টেস্ট হবে, তত ঝুঁকিমুক্ত হওয়া যাবে। অন্যথায় পরিস্থিতি ইতালি, স্পেনকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
নতুন আক্রান্ত ও মৃতদের তথ্য : ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. ফ্লোরা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও মৃত দু’জনের মধ্যে একজন গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছিলেন। অন্যজন আগেই শনাক্ত হয়েছিলেন। একজন ঢাকার বাইরের এবং অন্যজন ঢাকার বাসিন্দা। এই দু’জনের মধ্যে একজনের বয়স ৯০ বছর, অন্যজনের ৬৮ বছর। দু’জনই বয়স্ক হওয়ায় তাদের এমনিতেই ঝুঁকি বেশি ছিল। পাশাপাশি তারা দু’জনেই অসুস্থ ছিলেন। একজনের হৃদরোগ ছিল, তার হার্টে রিং পরানো ছিল। অন্যজনের স্ট্রোক হয়েছিল। ডা. ফ্লোরা বলেন, আক্রান্ত ৯ জনের মধ্যে দু’জন শিশু। তাদের বয়স ১০ বছরের নিচে। ৩ জনের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ২ জনের বয়স ৫০ থেকে ৬০ বছর, ১ জনের বয়স ৬০ থেকে ৭০ এবং একজনের বয়স ৯০ বছরের মধ্যে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বর্তমানে ২০ জন হাসপাতালে এবং ১২ জন বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আক্রান্তের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৫৫৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেগুলোর মধ্যে ৪৩৪টি পরীক্ষা করে ৯ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৬৯৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে এবং ২৬০ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৪৬৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইন এবং ১২ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে গেছেন ১৮ জন। ছাড়পত্র পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৩ জন। বর্তমানে ৭২ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।