২ সিটির মেয়র প্রার্থী ১৪ জন, কাউন্সিলর ১০২৫

sheikh-fazle-noor-taposh-311219-12

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ১৪ জন মেয়র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে উত্তর সিটিতে সাতজন এবং দক্ষিণ সিটিতে সাতজন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীসহ অধিকাংশ প্রার্থী মঙ্গলবার শেষ দিনে মনোনয়নপত্র জমা দেন।

এর আগে দুই সিটিতে মেয়র পদে মোট ১৮ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন দুই হাজার ২৬০ জন। কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এক হাজার ২৫ জন।

বৃহস্পতিবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে। মঙ্গলবার শেষ দিনে দুই রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ছিল প্রার্থী ও সমর্থকদের সরব উপস্থিতি। নিজ প্রার্থীর পক্ষে এ সময় তারা স্লোগানও দিয়েছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী একজন প্রার্থীর সঙ্গে পাঁচজনের বেশি উপস্থিতির সুযোগ না থাকলেও অধিকাংশ মেয়র প্রার্থী সেটা অমান্য করেছেন। অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীও বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এতে লঙ্ঘন হয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধি। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাদের মৌখিকভাবে সতর্কও করা হয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, দক্ষিণ সিটিতে মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস, বিএনপির ইশরাক হোসেন, জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আবদুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির বাহরানে সুলতান বাহার ও গণফ্রন্টের আব্দুস সামাদ সুজন।

উত্তর সিটিতে মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, বিএনপির তাবিথ আউয়াল, জাতীয় পার্টির জি এম কামরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফজলে বারী মাসউদ, পিডিপির শাহীন খান, সিপিবির সাজেদুল হক ও এনপিপির আনিসুর রহমান দেওয়ান।

ঢাকা উত্তর সিটিতে ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন। এই সিটির ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৩৭৪ প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এই সিটির ১৮টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের বিপরীতে মনোনয়ন জমা পড়েছে ৮৯টি। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ভোটার সংখ্যা ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ জন। এই সিটির ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ডের বিপরীতে মনোনয়ন জমা পড়েছে ৪৬০টি এবং ২৫টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের বিপরীতে মনোনয়ন জমা পড়েছে ১০২টি।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের মূল ভবনের সঙ্গে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ঢাকা উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা হয়েছে। এখানে গতকাল সকাল থেকেই ছিল প্রার্থী ও সমর্থকের উপচেপড়া ভিড়। এর মধ্যেই দুপুর সাড়ে ১২টায় আতিকুল ইসলাম মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। অন্যদিকে সোয়া ১২টায় ঢাকা দক্ষিণ সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসেন শেখ ফজলে নূর তাপস। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, প্রস্তাবকসহ পাঁচজনের বেশি ব্যক্তি নিয়ে প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে আসতে পারবেন না। আবার কোনো বহরও নিয়ে যাওয়া যাবে না। তবে আতিকুল ও তাপসের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে দুই রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে শতাধিক নেতাকর্মী ভিড় করেন। এই দুই মেয়র প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে শতাধিক নেতাকর্মী তাদের ঘিরে ধরেন।

আতিকুল ইসলাম আগারগাঁওয়ে উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেমের হাতে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকা উত্তর শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান, এফবিসিসিআইর সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম ও বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। এ সময় তাদের সঙ্গে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীরা ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। কিন্তু তখন স্লোগান বন্ধ করার জন্য আতিকুল তাদের অনুরোধ জানান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আতিকুল বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তারা পাঁচজনই এসেছেন। বাইরে কোনো শোভাযাত্রা হয়নি। স্লোগান শুরু হলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিভিন্ন কাউন্সিলর প্রার্থীও মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেছেন। তাই ভিড় হতে পারে।

এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় উত্তরায় ৪ নম্বর সেক্টরে পুলিশের একটি গাড়ি আতিকুলের গাড়িবহরের সামনে ছিল। ৩০টি ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাস নিয়ে তার গাড়িবহর সেখান থেকে রওনা দেয়। গাড়িগুলো রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের খানিকটা দূরে রাখা হয়। একটি গাড়ি নিয়েই তিনি ইসি কার্যালয়ের সীমানার মধ্যে প্রবেশ করেন। তবে তিনি উত্তরার বাসা থেকে বের হওয়ার সময় কমপক্ষে ৩০টি প্রাইভেটকার তার বহরে ছিল। আর আতিকুলের গাড়ির সামনে পুলিশেরও একটি গাড়ি ছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশের কোনো গাড়ি ছিল না। এ তথ্য ঠিক নয়।

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে রাজধানীর গোপীবাগের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসেন ঢাকা দক্ষিণের আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তাপস। এ সময় তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ, বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল, তাপসের ভাই যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরসহ ১৫ থেকে ২০ জন নেতা ছিলেন। তাদের সঙ্গে নিয়েই তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন ফজলে নূর তাপসের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন এবং যাতে আচরণবিধি লঙ্ঘন না হয়, সে বিষয়টি খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাপসের সহযোগিতাও চান তিনি। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তাপস। পাঁচজনের বেশি নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রবেশে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে তাপস বলেন, তিনি নির্দিষ্ট সংখ্যক লোক নিয়েই এসেছেন। দলের সিনিয়র নেতারা তার সঙ্গে এসেছেন। কিন্তু কার্যালয়ের ভেতরে অন্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা ছিলেন। এ কারণেই সংখ্যা বেড়ে গেছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রবেশের আগে আওয়ামী লীগসহ দলটির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কয়েকশ’ নেতাকর্মী তাপসকে ঘিরে স্লোগান দিতে থাকেন। তারাও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দেন। তবে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কয়েকজন ভেতরে ঢুকে পড়েন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সমর্থকরা আবার স্লোগান দেওয়া শুরু করেন।

দুপুর ২টার দিকে উত্তর সিটির বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল মনোনয়নপত্র জমা দিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসেন। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ ১০ থেকে ১২ জন সমর্থক ছিলেন। এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেন, ওই সময়ে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক তাদের সঙ্গে এখানে ঢুকেছেন। তাই কে সাংবাদিক, আর কে প্রার্থীর সঙ্গে, তা অনেক সময় চিহ্নিত করা যায় না। তবে তিনি বিএনপি প্রার্থীকে জিজ্ঞাসা করেছেন, তার সঙ্গে কতজন আছেন। তিনি বলেছেন, পাঁচজন নিয়েই তিনি এসেছেন।

অন্যদিকে বেলা পৌনে ৩টার দিকে দক্ষিণ সিটির বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইশরাক হোসেন মনোনয়নপত্র জমা দেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের কাছেই তার বাসভবন। দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাস, ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা আবদুস সালাম ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসকে নিয়ে নিজ বাড়ি থেকে বের হন। মির্জা আব্বাস ও ইশরাক একই গাড়িতে ওঠেন। তাদের গাড়ির পেছনে আরও সাতটি গাড়িতে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ছিলেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের কাছে এসে সবাই গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। তারা প্রায় ৫০ জন সেখানে ছিলেন। পরে মির্জা আব্বাস, আবদুস সালামসহ পাঁচজনকে নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রবেশ করেন বিএনপি প্রার্থী ইশরাক। এ সময় অন্যরা বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন।

গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বর মনোনয়ন জমার শেষ তারিখ, যাচাই-বাছাই ২ জানুয়ারি, প্রত্যাহার ৯ জানুয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ ১০ জানুয়ারি এবং ভোটগ্রহণ হবে ৩০ জানুয়ারি। প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারের সুযোগ পাবেন প্রতীক বরাদ্দের পর।

—————————————————————————————————————————————————————-

মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন আতিকুল ও তাপস

aaaaaa-5e0b0e8b4b12d

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেমের হাতে মনোনয়নপত্র জমা দেন আতিকুল।

এ সময় আওয়ামী লীগ ঢাকা উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি, ফুটবলার সালাহউদ্দিনসহ বিজনেস কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে রাজধানীর গোপীবাগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আব্দুল বাতেনের হাতে মনোনয়নপত্র জমা দেন তাপস।

এ সময় তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ উপস্থিত ছিলেন।

Pin It