ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের এক আলোচনা সভায় খন্দকার মোশতাক আহমেদের প্রতি ‘শ্রদ্ধা’ জানিয়ে বিপাকে পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ।
তবে অধ্যাপক রহমত উল্লাহর দাবি, তিনি বক্তব্যে মুজিবনগর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের নাম উল্লেখ করেছিলেন, খন্দকার মোশতাককে শ্রদ্ধা জানাননি।
তবে বক্তব্যের রেকর্ডে সত্যতা প্রমাণিত হলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাইবেন বলেও জানান আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের নীল দলের এই নেতা।
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে রোববার টিএসসি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, “শিক্ষক সমিতির সভাপতির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানান এবং তা এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানান। পরে উপাচার্য তার বক্তব্যে এটাকে এক্সপাঞ্জ করেছেন।
“আমরা যারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম, এই কাজটিকে ধৃষ্টতাপূর্ণ কাজ হিসেবে মনে করছি। বঙ্গবন্ধু খৃনিকে নিয়ে এধরনের বক্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করতে পারে না।”
একাত্তরে মুজিবনগর সরকার গঠনের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে ছিলেন খন্দকার মোশতাক। তবে ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে তার জড়িত থাকার কথা বলে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
উপ- উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, “মুজিবনগর সরকারের সব মন্ত্রীকে তাদের অবদানের জন্য শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে অধ্যাপক রহমত উল্লাহ খন্দকার মোশতাকের নামও উল্লেখ করে শ্রদ্ধা জানান।
“খন্দকার মোশতাক মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত ছিলেন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাকে চোখে চোখে রাখতে হয়েছে। তাই, শিক্ষক সমিতির সভাপতির বক্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রহণ করবে না এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার এটা গ্রহণ করে না।”
এবিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
বিষয়টি নিয়ে অধ্যাপক রহমত উল্লাহ বলেন, “আমি খন্দকার মোশতাককে শ্রদ্ধা জানাইনি। মুজিবনগর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রাণালয়ে কে কোন দায়িত্বে ছিল, সেটা আমি উল্লেখ করেছি। সেখানে আমি হীনকর্মের জন্য কুলাঙ্গার ব্যক্তিত্বের জন্য মোশতাকের নিন্দা জানিয়েছি।
“কোনো একটি অংশকে নিয়ে কথা বলা হলে পরিপূর্ণ তথ্য আসবে না। সম্ভবত বিটিভি পুরো অনুষ্ঠান রেকর্ড করেছে। বিটিভি যদি রেকর্ড করে থাকে, তাহলে রেকর্ডটাই সত্য কথা বলবে।”
বক্তব্যের রেকর্ডে সত্যতা প্রমাণিত হলে ক্ষমা চাইবেন জানিয়ে আইনের এই অধ্যাপক বলেন, “আমি সজ্ঞানে এমন কিছু বলি নাই। যদি বলে থাকি, তাহলে এটা আমার অজ্ঞতাবশত হবে। এজন্য আমি ক্ষমা চাইব এবং দুঃখ প্রকাশ করব।”
এদিকে অধ্যাপক রহমত উল্লাহর বক্তব্যকে ‘ধৃষ্টতাপূর্ণ’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহার ও আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার দাবিতে সোমবার সকাল ১১টায় উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এছাড়া বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠন অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের দাবিতে সোমবার বিকাল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।