ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির পরিবারের সদস্যদের যতদিন দরকার ততদিন নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
দেশ-বিদেশ নাড়িয়ে দেওয়া এই হত্যার ঘটনায় বিচার শেষ করে সাত মাসের মাথায় রায় ঘোষণার পরদিন শুক্রবার গুলশানের বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী একথা বলেন।
ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ অভিযুক্ত ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
আদালত প্রাঙ্গণে রায় নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও আসামিদের পক্ষ থেকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করে নিরাপত্তার শংকা প্রকাশ করেন নুসরাতের পরিবারের সদস্যরা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, “নুসরাতের পরিবারকে যতদিন পর্যন্ত নিরাপত্তা দেওয়া প্রয়োজন, ততদিন নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এটাও বলে দেই, তাদেরকে যদি আসামি বা কুচক্রী মহল হুমকি বা থ্রেট করে, তারও কিন্তু শক্ত বিচার করা হবে।”
নুসরাতের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে পুলিশের পাঁচ সদস্যের একটি দল দায়িত্বে রয়েছে বলে সোনাগাজী থানার ওসি মাইনউদ্দিন জানিয়েছেন।
অধ্যক্ষের যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ করায় ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
দ্রুত সময়ে মামলার রায় দেওয়ার বিষয়ে কোনো ‘ক্যারিশমা’ কাজ করেছে কিনা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, “এখানে ক্যারিশমার কি আছে? বিজ্ঞ আদালত এটার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পরেছেন এবং বুঝতে পেরেছেন যে বাংলাদেশের জনগণ ও জনগণের নেতা শেখ হাসিনা চান সকল আইনি প্রয়োজন সম্পন্ন করে মামলাটা দ্রুত নিষ্পত্তি করা হোক। যখন মামলা শুরু করেছেন, তখন কাউকে কোনো সময় না দিয়ে মামলাটা চালিয়ে গেছেন।”
এখন উচ্চ আদালতে এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা হবে জানিয়ে আনিসুল বলেন, যত কম সময়ে পারা যায় মামলা প্রস্তুত করে ‘আমি হাইকোর্টে বিচারের জন্য রেডি করব’।
১৬ জনের সবার ফাঁসির রায় উচ্চ আদালতে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশে আইনে যেটা বলে এরকম হত্যাকাণ্ডে সবচেয়ে আগে ক্যাপিটাল পানিশমেন্টের কথা চিন্তা করতে হবে। যদি কোন ‘মিটিগেটিং সারকামস্ট্যান্সেস’ থাকে তাহলে যাবজ্জীবনের কথা চিন্তা করা হয়।”
সেদিক থেকে পুরনো মামলার রেফাফেন্স টেনে এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত এক নারীর শিশু সন্তান থাকায় তার ক্ষেত্রে সাজা কমে যাবজ্জীবন দিয়ে উচ্চ আদালত বাকিদের সাজা বহাল রাখতে পারেন বলে তিনি ইঙ্গিত দেন।
এই মামলার মতো নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা অপর মামলাগুলোর বিচার দ্রুত করা হবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এখন বিচারিক আদালতের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সব সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে।
“সেজন্য আদালতে বিচার করার পরিবেশ এসেছে এবং সে কারণেই এসব বিচারগুলো তাড়াতাড়ি হবে বলে মনে করি।”
আবরার হত্যার দ্রুত বিচার নিয়ে তিনি বলেন, “যে রকম একটা কথা ‘জাস্টিস ডিলেইড জাস্টিস ডিনাইড’। পাশাপাশি কিন্তু আরেকটি কথা আছে ‘জাস্টিস হারিড, জাস্টিস বারিড’।
“বিচারিক কাজ করতে আদালতের যতটুকু সময় লাগবে সে সময় নিয়েই সুষ্ঠ বিচার নিস্পন্ন হবে।”
আলোচিত সাগর-রুনি ও তনু হত্যা মামলা বিচার আটকে আছে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, “মামলার অভিযোগপত্র এখনো দাখিল হয়নি, সে মামলা কীভাবে বলে তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলবে।
“তদন্তই তো শেষ হয়নি, তদন্তের ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করতে চাই না। যে সব মামলায় আসামি খুঁজে পাওয়া কঠিন, তদন্ত করতে সময় লাগে।”
নয় বিচারপতি নিয়োগে বিএনপির পক্ষ থেকে রাজনৈতিক বিবেচনার অভিযোগ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, “যাদেরকে বিচারপতি করা হয়েছে, তাদের একজন হলেন সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ এবং প্রত্যেককে তার যোগ্যতা অনুসারে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
“তাদের গ্রাত্রদাহ হচ্ছে খালেদা জিয়া এতিমের টাকা চুরি করে এখন জেলে গেছে এজন্য বিচারকের দোষ, এ দোষ দিয়ে তো হবে না, উনারা তো এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে বের করতে পারছে না, তাহলে কি হাই কোর্টের দোষ।”