যুক্তরাষ্ট্রকে তোয়াক্কা না করে ব্যাপক পরিসরে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব গড়ে তুলছে ইরান এবং চীন।
এই অংশীদারিত্বের একটি খসড়া চুক্তি করেছে দু’দেশ। ১৮ পাতার এই প্রস্তাবিত চুক্তির বিস্তারিত বিবরণ হাতে পেয়েছে ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকা।
এ চুক্তির আওতায় ইরানের ব্যাংকিং, টেলিকমিউনিকেশন, বন্দর, রেলওয়েসহ আরও ডজনখানেক প্রকল্পে চীনের শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগের পথ খুলে যাবে।
ব্যাহত হবে ইরানকে একঘরে করার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টাও।
তাছাড়া, ইরানে বিপুল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগের বিনিময়ে চীন আগামী ২৫ বছর ধরে অনেক বেশি মূল্যছাড়ে ইরানের তেল পাবে। এক ইরানি কর্মকর্তা এবং তেল ব্যবসায়ী একথা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, দুইদেশের সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে চুক্তির আওতায় ওই অঞ্চলে চীনের পদচারণার পাশাপাশি যৌথ প্রশিক্ষণ, মহড়া, যৌথ গবেষণা, অস্ত্র উন্নয়ন এবং গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের দ্বার খুলে যাবে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৬ সালে ইরান সফরকালে প্রথম অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই প্রস্তাব জুনে অনুমোদন করেছে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির মন্ত্রিসভা।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ গত সপ্তাহে একথা জানিয়েছেন।
চুক্তিটির বিস্তারিত বিবরণে যা বলা আছে, তেমনভাবেই এটি কার্যকর হলে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অবনতিশীল সম্পর্কের আবহে এটি নতুন করে আরেক ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনবে।
দুই দেশের এ সখ্যতায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ আরও বাড়বে। তাছাড়া, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের আগ্রাসী নীতিও এতে ধাক্কা খাবে। ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৫ সালের ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পর থেকেই ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী নীতি নিয়েছে।
বারবার ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করা যে কোনও কোম্পানিকে আন্তর্জাতিক ব্যংকিং ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার হুমকিও যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ থেকে ইরানকে দূরে রেখে দেশটির অর্থনীতিকে কোনঠাসা করতেও যুক্তরাষ্ট্র সফল হয়েছে।
অর্থনীতি বাঁচাতে মরিয়া ইরান এখন নিজেদের প্রয়োজনেই চীনের দিকে ঝুঁকছে। চীনের আছে প্রযুক্তি এবং তেলের চাহিদা। আর ইরানের সেটিই এখন দরকার। ইরান বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদনকারী দেশ।
কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার চাপে পড়ে ইরানের তেল রপ্তানি কমে গেছে। চীনের তেলের ৭৫ শতাংশই বিদেশ থেকে আসে এবং দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল আমদানিকারক। গত বছর চীনে এক দিনে ১ কোটি ব্যারেলেরও বেশি তেল আমদানির রেকর্ড আছে।
যুক্তরাষ্ট্র এ মুহূর্তে করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এ দুর্বলতা আঁচ করে চীন এখন নিজেকে যথেষ্ট প্রভাবশালী মনে করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করে এগুচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে ইরানের সঙ্গে দেশটির খসড়া চুক্তির ঘটনায়।