যুক্তরাষ্ট্রের ‘এনবিসি টিভি’র টক শো ‘লিটল বিগ শট’-এ অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশি-আমেরিকান শিশু সুবর্ণ।
স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় এনবিসির এ অনুষ্ঠানে সুবর্ণের (৮) সাক্ষাৎকার নেন যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেত্রী মেলিসা ম্যাকার্থি।
৪ বছর আগে সারা পৃথিবী থেকে ‘মেধাবী হিসেবে স্বীকৃত’ ৩০ হাজার শিশু তালিকাভুক্ত করে এনবিসি। নানাভাবে এদের সঙ্গে কথা বলে, সাক্ষাৎকার নেওয়ার পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষাও নেওয়া হয়। এরপর বেছে নেওয়া হয়েছে ২০ জনকে। তারই একজন বাংলাদেশি-আমেরিকান সুবর্ণ।
নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্কসে মা-বাবার সঙ্গে বাস করছেন সুবর্ণ। তার বাবা রাশিদুল বারি এখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
সুবর্ণের পরিচিতিপর্ব দিয়েই শুরু হয় এনবিসির সাক্ষাৎকার। এতে বলা হয়, “সুবর্ণের জন্ম ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল নিউ ইয়র্কের একটি বাঙালি পরিবারে। সুবর্ণ মাত্র ৬ বছর বয়সে অর্থাৎ ২০১৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে বিজ্ঞানী হিসেবে। নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী তাকে দিল্লিতে ‘গ্লোবাল চাইল্ড প্রোডিজি অ্যাওয়ার্ড’ দেন বিজ্ঞানী হিসেবে। রুইয়া কলেজ অব মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ভিজিটিং অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে। সবচেয়ে বড় কথা, ২০১৪ সালে নিউ ইয়র্ক সিটি কলেজের প্রেসিডেন্ট লিসা কোইকো সুবর্ণকে ‘আমাদের সময়ের আইনস্টাইন’ উপাধি দেন।”
মেলিসা: পদার্থবিজ্ঞানী হওয়ার জন্য তোমার কি বো টাই দরকার?
সুবর্ণ: না, পদার্থবিজ্ঞানী হওয়ার জন্য আপনার কোন বো টাইয়ের দরকার নেই। আপনার কেবল দরকার অধ্যবসায়, পরবর্তী স্যার আইজ্যাক নিউটন এবং অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু আপনি যদি আমার মতো কোনও ফেন্সি লুকিং ফিজিসিস্ট হতে চান, তবে বো টাই দরকার।
মেলিসা: ডার্ক চকলেটের সঙ্গে কি ডার্ক ম্যাটারের কোন সম্পর্ক আছে?
সুবর্ণ: না, নিঃসন্দেহে কোনও সম্পর্ক নেই।
মেলিসা: একেবারেই না?
সুবর্ণ: না।
( এনবিসিতে সুবর্ণ আইজ্যাক )
মেলিসা: ডার্ক ম্যাটার সমস্যা সমাধানের সময় তুমি কি ডার্ক চকলেট খাও?
সুবর্ণ: না, তবে চাইলে আমি দুটি একই সঙ্গে করতে পারি।
মেলিসা: তুমি কি কখনও কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ভুলে যাও, যেমন গত বছর তুমি যে সবুজ সোয়েটারটা পরেছিলে তা কি মনে আছে? তুমি কি প্রায়ই মনে মনে বলে থাকো- কেন আমি সেই সবুজ সোয়েটারটা খুঁজে পাচ্ছি না?
সুবর্ণ: যতদুর মনে পড়ে আমি গত বছর সবুজ সোয়েটার পরিনি।
সুবর্ণ: (কয়েক মুহূর্তের ভাবনার পর) হয়তো পরেছি। আমার মনে নেই।
মেলিসা: দেখ আমি তোমাকে বলেছিলাম না যে তুমি সবকিছু মনে রাখতে পার না। আমি সঠিক ছিলাম।
সুবর্ণ: তুমি ঠিক মেলিসা! আসলে, এ জাতীয় প্রশ্ন আমাকে আইনস্টাইন সম্পর্কে মনে করিয়ে দেয়। তিনি নিজের গবেষণাকর্মে এতটাই নিবিষ্ট থাকতেন যে, একদিন আইনস্টাইন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেরার সময় তার বাড়ির ঠিকানা ভুলে গিয়েছিলেন।
মেলিসা: তুমি নিজেকে কিভাবে এত স্মার্ট ভাব?
সুবর্ণ: আমি স্মার্ট, কারণ আমি এই অল্প বয়সেই পিএইচডি স্তরের গণিত সমস্যার সমাধান করতে পারি।
মেলিসা: বিষয় পরিবর্তন করা যাক! কি বল?
সুবর্ণ: ঠিক আছে।
মেলিসা: প্রেসিডেন্ট ওবামা কেন তোমাকে স্বীকৃতি দিলেন?
সুবর্ণ: কারণ আমি পিএইচডি স্তরের গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারি। ওবামার সেই চিঠি আমি পেয়েছি ২০১৬ সালের নভেম্বরে, যখন আমার বয়স মাত্র ৪ বছর। আমি বিস্ময়ে হতবাক যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত একজন মানুষ আমাকে চিঠি লিখেছেন।
মেলিসা: এখন সিরিয়াস হয়ে যাই। কি বল?
সুবর্ণ: কোন সমস্যা নেই।
মেলিসা: তোমার জন্য একটি বিশাল রোলার কোস্টার তৈরি করেছি। আমরা তোমাকে একটি বল ও টেপ দেব। তুমি পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহার করে বের করবে এক প্রান্তের সর্বনিম্ন কত উচ্চতা থেকে বলটি ছেড়ে দিতে হবে, যাতে এটি পর্যাপ্ত বেগ পায় এবং কোস্টারের অন্য প্রান্তে বেলুনটিকে ফুটাতে পারে।
টিভিতে একজন বাঙালি-আমেরিকান শিশু-বিজ্ঞানীর এ উত্তেজনাপূর্ণ পরীক্ষাটি দেখে লাখ লাখ আমেরিকান শিশু পদার্থবিদ্যার প্রেমে পড়ে যায় বলে মন্তব্য করেন প্রবাসীরা।