বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩টিতে নতুন করোনাভাইরাসের রোগী পাওয়া গেলেও পাহাড়ি জেলা রাঙামাটি এখনও কোভিড-১৯ মুক্ত।
রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য জানাচ্ছে, ১ মে অবধি এই জেলা থেকে মোট ২২৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে ১৩৩ জনের পরীক্ষার প্রতিবেদন ফেরত এসেছে এবং প্রতিটিই ‘নেগেটিভ’।
স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্গম ভৌগলিক অবস্থান সুবিধা দিলেও স্থানীয় প্রশাসনের ত্বরিত তৎপরতার কারণে এখানে সংক্রমণ ঘটেনি।
এখন পর্যন্ত সফল হলেও রাঙামাটির জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশীদ বলছেন, তবে কাজে কোনোভাবেই ঢিলেমি আনা চলবে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশে রাঙামাটি বাদে বাকি ৬৩টি জেলায় এ পর্যন্ত ৮ হাজার ২৩৮ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম রোগী শনাক্তের পর রাঙামাটি জেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। ধাপে ধাপে মোট ১ হাজার ৭৯৮ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। এদের মধ্যে কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৬২১ জনের।
রাজস্থলী, বাঘাইছড়ি ও সদরে তিনজনের মৃত্যুতে সন্দেহ হলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ধরেই তাদের সৎকার করা হয়। তবে পরে নমুনা পরীক্ষায় কারো দেহেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েনি।
তবে রাঙামাটির লংগদুর বাসিন্দা এক ট্রাকচালক হবিগঞ্জে আক্রান্ত হয়ে সেখানেই চিকিৎসাধীন। বেতবুনিয়ার এক মারমা তরুণ নারায়ণগঞ্জে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় আক্রান্ত হয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ভৈরবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মরত রাঙামাটির এক বাসিন্দাও সেখানেই চিকিৎসাধীন।
৬ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশের সবচে বড় জেলা রাঙামাটির জনসংখ্যা সোয়া ৬ লাখের মতো। এই বিশাল জনসংখ্যার মধ্যে এযাবৎ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ২২৭ জনের।
এটি যথেষ্ট কি না- এ প্রশ্নের জবাবে রাঙামাটি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা ইউনিটের ইনচার্জ ডা. মোস্তফা কামাল বলেন, “আমরা যাদেরকে সন্দেহভাজন পাচ্ছি, তাদের সবারই নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। এখন সুস্থ কাউকে ধরে তো তার নমুনা সংগ্রহ করার তো কোনো মানে নাই।’
রাঙামাটির জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রশংসা করে এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, “রাঙামাটির প্রশাসন সারাদেশের চেয়ে একেবারেই ব্যতিক্রম ছিল। উনারা শুরু থেকেই রাঙামাটির সবগুলো প্রবেশপথ বন্ধ করে বাইরে থাকা মানুষকে হোম কোয়ারেন্টিন ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে বাধ্য করেছেন। কাউকেই ন্যূনতম ছাড় দেননি।
“জেলার মানুষও অনেক বেশি সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন। একইসাথে রাঙামাটি জেলার ভৌগলিক অবস্থান, দুর্গমতা ও হ্রদবেষ্টিত হওয়ার কারণে কিছু সুবিধাও মিলেছে।”
তবে ‘এখনই আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো কারণ নেই’ মন্তব্য করে ডা. কামাল বলেন, “বিপদ এখনও কাটেনি। করোনামুক্ত শেষ পর্যন্ত থাকা যাবে, এমনটাও ভাবা উচিৎ হবে না।”
রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার করছে জেলেরা; প্রাকৃতিক প্রজনন ও মৎস্যসম্পদ বাড়াতে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে আগামী তিন মাসের জন্য এই লেকে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।
কী করে এ পর্যন্ত সফল থাকা গেল- প্রশ্নে জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ স্থানীয়দের সচেতন থাকার কথাও বলেন।
“রাস্তায় বের হলে আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন, একজন মানুষও নেই যিনি মাস্ক ছাড়া বের হচ্ছেন। রাঙামাটির মানুষ তুলনামূলকভাবে বেশ সচেতন।”
এখনও সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, “করোনামুক্ত থাকতে পারব এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। এইজন্য সবাইকে সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। কোনোভাবেই বর্তমান পরিস্থিতিকে ঢিলেঢালা করা যাবে না। সবাইকে বাসায় থাকতে হবে, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।”
গত কয়েকদিনে কারও কারও ঢিলেমির বিষয়টি নজরে আসার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “এজন্য মোবাইল কোর্টকে আরও সক্রিয় করেছি এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও কঠোর হয়েছে।”