স্বতন্ত্র ও ডামি প্রার্থীদের তোপের মুখে বেশ কিছু আসনে অস্বস্তিতে রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের হেভিওয়েট প্রার্থীরা। ওই আসনগুলোতে স্বতন্ত্র ও ডামি প্রার্থীদের দাপটে কোণঠাসা ক্ষমতাসীন জোটের বাঘা বাঘা নেতারা। কেন্দ্র থেকে ডামি প্রার্থীদের লাগাম টেনে না ধরলে ৭ জানুয়ারি তাদেরকে সত্যিকারের জনপ্রিয়তার পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে।
স্বতন্ত্র বা ডামি প্রার্থীর বিষয়ে কেন্দ্রের নমনীয় মনোভাবের কারণে অনড় অবস্থানে তারা। ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র তুলেছেন এবং জমাও দিয়েছেন অনেকে। একইভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে নৌকার ওপর ভর করে সংসদ-সদস্য হওয়া ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের। এবার তাদের আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ঘোষণা করায় বেশ বিপাকে আছেন। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মাঠে থাকবেন নাকি কেন্দ্রের নির্দেশে তারা সড়ে দাঁড়াবেন, নাকি আওয়ামী লীগেরই কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ভোটে লড়বেন-এমন শঙ্কার মধ্যে সময় পার করছেন শরিক দলের নেতারা। ভোটের মাঠে এর যে কোনো একটি থাকলেই শরিক দলের অনেক নেতার জন্য পাশ করে আসা খুব সহজ হবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ডামি প্রার্থীদের বিষয়ে কেন্দ্রের ইতিবাচক মনোভাব থাকায় বেশ কিছু আসনে স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধিরা এবার নির্বাচনি দৌড়ে সামিল হয়েছেন। তাদের অনেকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এটিও বহু হেভিওয়েট নেতার কপালে ভাঁজ ফেলেছে।
আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হন। এবার এই আসনে আওয়ামী লীগ তাদের দল মনোনীত কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। এরপরও স্বস্তিতে নেই ১৪ দলীয় জোটের এই শীর্ষ নেতা। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন। নির্বাচনে প্রার্থী হতে উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে হাসানুল হক ইনুকে কোনো অবস্থাতেই ছাড় না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে হাসানুল হক ইনু বুধবার বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের আসন সমঝোতা হবে। আমরা জোটবদ্ধভাবেই নির্বাচনে অংশ নেব। সেভাবেই আমরা এগোচ্ছি।
স্বস্তিতে নেই আওয়ামী লীগের আরেক প্রধান শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পর্টির সভাপতি, বর্ষীয়ান রাজনীতিক রাশেদ খান মেননও। ঢাকা-৮ আসন থেকে গত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে সংসদ-সদস্য হন তিনি। এবার তার এই আসনে আওয়ামী লীগ দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে প্রার্থী দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাশেদ খান মেননকে এবার আর ঢাকার এই আসনে ছাড় দেবে না ক্ষমতাসীনরা। তাকে ঢাকার পরিবর্তে বরিশাল-২ ও বরিশাল-৩ আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে বলা হয়েছে। শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ বরিশালের যে কোনো একটি আসন তাকে ছেড়ে দিতে পারে।
যদিও বরিশাল-২ আসনের বর্তমান সংসদ-সদস্য আওয়ামী লীগের শাহ আলমকে এবার মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তার পরিবর্তে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুসকে এবার এ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। একইভাবে বরিশাল-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে সরদার মো. খালেদ হোসেনকে। এ আসনের বর্তমান সংসদ-সদস্য জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু। শরিক দলের সঙ্গে আসন সমঝোতার অংশ হিসাবে রাশেদ খান মেননকে আওয়ামী লীগ নৌকা দিলে তাদের এ দুই প্রার্থীর যে কোনো একজনকে বাদ দিতে হবে। তবে বরিশাল-৩ আসনে যদি রাশেদ খান মেননকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ, সেক্ষেত্রে লাঙ্গলের প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপুর সঙ্গে তাকে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে বেশ বেকায়দায় আছেন প্রবীণ এই বামপন্থি রাজনীতিক।
আওয়ামী লীগের আরেক শরিকদল জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর অবস্থা তেমন সুবিধার নয়। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে পিরোজপুর-২ আসন থেকে গত তিনটি নির্বাচনে বাইসাইকেল নিয়ে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এবার নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। কিন্তু এই আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কানাই লাল বিশ্বাসকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। শেষ মুহূর্তে আসন সমঝোতার অংশ হিসাবে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হলেও স্থানীয় পর্যায়ে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে তাকে। এই আসনে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে কোনো অবস্থায়ই আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে ছাড় দেওয়া হবে না।
ফরিদপুর-৪ আসনে আবারও নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যন করা হয়েছে। এ প্রভাবশালী নেতার আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনি মাঠে আছেন বর্তমান সংসদ-সদস্য এবং যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন)। এর আগে দলের মনোনয়ন পেয়েও নিক্সন চৌধুরীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন কাজী জাফরউল্লাহ। এবারও সেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট এই কেন্দ্রীয় নেতা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সিমিন হোসেন রিমি দলের মনোনয়ন পেয়েছেন গাজীপুর-৪ আসন থেকে। তার আসনেও দলের দুই নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মাঠে আছেন। তারা হলেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আলম আহম্মেদ ও কাপাসিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান আরিফ। চাঁদপুর-৩ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তার আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মো. রেদওয়ান খান (বোরহান)। আরেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এবারও কুষ্টিয়া-৩ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তার আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন পারভেজ আনোয়ার তনু। তনুর বাবা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান পৌর মেয়র।
আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল দলের মনোনয়ন পেয়েছেন নেত্রকোনা-৩ আসন থেকে। তার আসনে ভোটের মাঠে রয়েছেন সাবেক দুই সংসদ-সদস্য ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু ও মঞ্জুর কাদের কোরাইশী। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মতিনও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন এবার দলের মনোনয়ন পেয়েছেন নেত্রকোনা-৫ আসন থেকে। প্রথমবার মনোনয়ন পাওয়া এই কেন্দ্রীয় নেতার আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, যুবলীগ নেতা মাজহারুল ইসলাম সোহেল ও পূর্বধলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজন।
রংপুর-৬ আসনে আবারও নৌকা পেয়েছেন বর্তমান সংসদ-সদস্য ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। নৌকা না পেয়ে এখান থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সিরাজুল ইসলাম। তিনি ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। গাজীপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তার আসনে স্বতস্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল। একই আসনে আছেন কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেল এবং আওয়ামী লীগ নেতা নুরে আলম সিদ্দিকী।
পিরোজপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ফরম কিনেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য একেএমএ আউয়াল। গাজীপুর-২ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। এ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ইতোমধ্যে তিনি মনোনয়নপত্র কিনেছেন বলেও জানা গেছে।
যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। তাকে চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি ইয়াকুব আলী, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু ও সাবেক সংসদ-সদস্য খান টিপু সুলতানের ছেলে হুমায়ন সুলতান। ঢাকা-১৯ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। তার আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মাঠে রয়েছেন দুজন-সাবেক সংসদ-সদস্য তৌহিদ জং মুরাদ এবং আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম।
রাজশাহী-৬ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ-সদস্য রায়হানুল হক। হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী। ওই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সুমন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। পরে তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াত সাদেক আবদুল্লাহ। ফলে এ আসনে বড় চ্যালেঞ্জে পড়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। জামালপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ভোটের মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের আরও দুই নেতা-জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও সাবেক পৌর মেয়র জিয়াউল হক জিয়া এবং ঢাকার বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শাহজাহান আলী মন্ডল। নেত্রকোনা-২ আসনে থেকে আবারও নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু। তার বিরুদ্ধে ভোটের মাঠে আছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ-সদস্য ও উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান লিটন।
এছাড়া সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। কুমিল্লা-১১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ভোটের মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা তমিজ উদ্দিন ভুঁইয়া সেলিম। রাজশাহী-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন টানা পঞ্চমবার নৌকার প্রার্থী হওয়া বর্তমান সংসদ-সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী। সেই আসনে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান আখতার।
ক্ষমতাসীনদের দুই শরিক দলের শীর্ষ নেতা বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান এবং একই দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরীর অবস্থাও বেগতিক। শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের মতো কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদেরও। অন্য দুই শরিদক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, একই দলের সহসভাপতি রেজাউল করিম তানসেন এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক, প্রবীণ রাজনীতিক ফজলে হোসেন বাদশাও বেশ বিব্রতকর অবস্থায় আছেন।
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে নৌকা নিয়ে পরপর দুবার নির্বাচিত হন। এবার তার আসনে খাদিজাতুল আনোয়ারকে প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এছাড়াও বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে এবং একই দলের যুগ্মমহাসচিব, সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে মাহী বি চৌধুরী মুন্সিগঞ্জ-১ আসন থেকে পরপর দুবার সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ এবার লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী ফরিদুন্নাহার লাইলী এবং মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে মহিউদ্দিন আহমেদকে মনোনয়ন দিয়েছে। আসন সমঝোতা না হলে অনিশ্চিত হবে তাদের ভাগ্যও।
আওয়ামী লীগের অন্য দুই শরিক দলের শীর্ষ নেতা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার ফেনী-১ আসন থেকে পরপর দুবার নৌকা নিয়ে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। এবার তার আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীকে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিরিন আখতারকে এই আসনে আর ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী শেষ পর্যন্ত নৌকা নিয়ে ভোট করবেন। শিরিন আখতারকে সংরক্ষিত আসনের সদস্য করা হতে পারে পরবর্তী সময়ে। জাসদের সহসভাপতি রেজাউল করিম তানসেন বগুড়া-৪ আসনের বর্তমান সংসদ-সদস্য। এ আসনে আওয়ামী লীগ মো. হেলাল উদ্দিন কবিরাজকে এবার মনোনয়ন দিয়েছে। আসন সমঝোতা হলে রেজাউল করিম তানসেনের ভাগ্য খুলে যেতে পারে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের আরেক শীর্ষ নেতা বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা পরপর তিনবার নৌকা নিয়ে রাজশাহী-২ আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। এবার তার আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে মোহাম্মদ আলীকে। আসন সমঝোতা না হলে কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে ফজলে হোসেন বাদশাকে। তবে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শেষ পর্যন্ত ফজলে হোসেন বাদশাই হবেন রাজশাহী-২ আসনে নৌকার কান্ডারি।