ভারতের কাছে ৪-০ গোলে হেরে সাফের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে বর্তমান রানার্সআপ বাংলাদেশ। বয়সভিত্তিক ফুটবলে যে মেয়েরা একের পর এক সাফল্যের আলোয় আলোকিত করেছে বাংলাদেশকে, সিনিয়র পর্যায়ে সেই মেয়েরাই চিনে গেছে ফুটবলের নিষ্ঠুর পৃথিবীকে। জাতীয় দল আর বয়সভিত্তিক দলের পার্থক্য যে আকাশ-পাতাল, বাস্তবতাটা এতক্ষণে বুঝে গিয়েছেন মারিয়া মান্দা, মণিকা চাকমারা।
তারুণ্যনির্ভর দল নিয়ে এত বড় জয় আশা করেনি ভারতও। গুরুত্বপূর্ণ দুই অভিজ্ঞ ফুটবলার বালা দেবী ও কমলা দেবীকে বিশ্রামে রেখেছিল তারা। নতুন প্রজন্মের নতুন দল গঠনের লক্ষ্যে তারুণ্যনির্ভর একটি দল নিয়ে সাফ খেলতে এসেছে তারা। ফলে সাবিনাদের সামনে সুযোগ ছিল তারুণ্যনির্ভর এই ভারতকে চ্যালেঞ্জ জানানো। কিন্তু সেটি হয়নি। বড় হার সঙ্গী হয়েছে দলের। বিরাটনগরের ভারতের কাছে বড় হারের কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো।
গোলরক্ষকের দুর্বলতা
সাধারণত দেখা যায় দলের সবচেয়ে লম্বা খেলোয়াড়টি হয়ে থাকেন গোলরক্ষক। কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের ক্ষেত্রে বিষয়টা উল্টো। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে উচ্চতায় সবচেয়ে কম গোলরক্ষক রুপনা চাকমা। মেরেকেটে তাঁর উচ্চতা হতে পারে বড়জোর পাঁচ ফুট। তাই বাতাসে বল দখলে নেওয়ার ক্ষেত্রে সব সময়ই পিছিয়ে থাকেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে আজ প্রথম গোলটা হজম করতে হয়েছে কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে, রুপনার হাত ফসকেই। গোটা টুর্নামেন্টেই তাঁর কিপিং ছিল দুর্বল। অহেতুক পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে আসা, সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার মতো সমস্যাগুলো ছিল তাঁর মধ্যে। বড় ম্যাচে চাপ নিতে না পারার সীমিত সামর্থ্যও একটা বড় সমস্যা ছিল।
দক্ষতায় সীমাবদ্ধতা
গতি, শক্তি,দম ও দক্ষতা—ফুটবলে এই তিনটি গুণ থাকা প্রয়োজন। প্রথম তিনটিতে ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিলেও দক্ষতায় অনেকটাই পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। অধিনায়ক সাবিনা খাতুনকে বাদ দিলে বাংলাদেশের এই দলটি অনভিজ্ঞ। বেশির ভাগ খেলোয়াড়েরই বয়স ২০-এর নিচে। বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে দোর্দণ্ড প্রতাপ থাকলেও বড়দের ফুটবলে তারা এখনো অনেক পিছিয়ে।
ম্যাচ দেখে বারবার মনে হয়েছে, সিনিয়র পর্যায়ে ভালো দলগুলোর বিপক্ষে খেলার মতো সামর্থ্য নেই মাসুরা পারভিন, শিউলি আজিমদের। প্রতিপক্ষের প্রেসিংয়ে টালমাটাল হয়ে পড়ে বাংলাদেশের রক্ষণভাগ। একটু চাপেই বিচলিত হয়ে যান তাঁরা। নিচ থেকে বিল্ডআপের ব্যাপারটি যেন সে সময় ভুলেই যান খেলোয়াড়েরা। বলটি পা থেকে ছাড়তে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। কাকে দিচ্ছি, কোথায় দিচ্ছি, এসব বেমালুম গুলিয়ে ফেলে বারবারই বল তুলে দিয়েছেন ভারতীয় ফুটবলারদের পায়ে।
কোচ ছোটনের অদূরদর্শিতা
গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে (আগের ম্যাচ) নেপালের বিপক্ষে ৩-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। ম্যাচের পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের নাম ধরে ধরে সমালোচনা করেছিলেন বাংলাদেশ কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন। ব্যাপারটি খুব ভালো হয়নি। এতে খেলোয়াড়েরা নিজেদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। ফুটবল মাঠে যেকোনো খেলোয়াড়েরই ভুল হতে পারে, সেটি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য টিম মিটিং আছে। প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলন ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জায়গা নয়। এতে কোচ-খেলোয়াড় সম্পর্কে ফাটল ধরে। ম্যাচেও সেটি ফুটে ওঠে।
একাদশ গঠনে ভুল
চোটের কারণে গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচে খেলতে পারেননি ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানি সরকার। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। চোট কাটিয়ে ফিরে আসা কোনো খেলোয়াড়কে ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে নামিয়ে দিলে যা হয়, আজ সেটিই হয়েছে। তাঁর দৌড় ও বলে স্পর্শ দেখে মনে হয়েছে ম্যাচ খেলার উপযোগী ছিলেন না তিনি । আগের ম্যাচগুলো না খেলায় বাকি খেলোয়াড়দের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়ার অভাবও ফুটে উঠেছে স্পষ্ট।