বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে জ্বলজ্বল হয়ে আছে ২০০৩ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জয়। দুবছর পর পাকিস্তানের করাচিতে আরও একটা সাফের ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জেতা হয়নি। কিন্তু সেই আসরেই যে ফাইনাল খেলার যোগ্যতাটা জমা দিয়ে ফিরতে হবে, তা বোঝা যায়নি।
টানা চার আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের পর খানিকটা আশার বাতিঘর হয়ে এসেছে এবারের সাফ। আজ নেপালকে হারাতে পারলেই ১৬ বছর পর সাফের ফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ।
সাফের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলতে নেপালের প্রয়োজন ন্যূনতম ড্র আর বাংলাদেশের প্রয়োজন জয়। জেতা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা নেই জামাল ভূঁইয়াদের সামনে। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ও র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে আছে নেপালই। তবে কয়েকটি কারণে আজ ম্যাচটি জিততে পারে বাংলাদেশ। সে কারণগুলো খুঁজল প্রথম আলো….
বাংলাদেশের ৫ দিনের পূর্ণ বিশ্রাম
সর্বশেষ ম্যাচে মালদ্বীপের বিপক্ষে হারের পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের কোচ অস্কার ব্রুজোন বলেছিলেন, তাঁর খেলোয়াড়েরা ক্লান্ত। প্রিমিয়ার লিগ শেষ করে গিয়ে মালের গরম আবহাওয়ায় ৭ দিনের মধ্যে ৩টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা বাংলাদেশের ফুটবলারদের জন্য বড় ধকলের কাজই বটে। নেপাল ম্যাচের আগে টানা ৫ দিনের পূর্ণ বিশ্রাম পায় বাংলাদেশ। পুরোপুরি ধকল কাটিয়ে ওঠার জন্য ২ দিন তো কোনো অনুশীলনই রাখা হয়নি জামাল ভূঁইয়া, তপু বর্মণদের। খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলেই বোঝা যাচ্ছে, এখন ফুরফুরে হয়ে উঠেছেন তাঁরা। ৫ দিনের লম্বা এ বিরতিই আজ বাংলাদেশকে মাঠে নামার আগে স্বস্তি দিচ্ছে।
উজ্জীবিত বাংলাদেশ
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সর্বশেষ ৪ আসরের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রায় ১৬ বছর পর সাফের ফাইনালে খেলা থেকে এক পা দূরে দাঁড়িয়ে আছেন জামাল ভূঁইয়ারা। এ সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ফুটবলাররা। খেলোয়াড়দের মধ্যে দেখা যাচ্ছে বাড়তি অনুপ্রেরণা। দলীয় নির্দিষ্ট সভার বাইরেও খেলোয়াড়েরা নিজেদের উদ্যোগেও কয়েক দফা সভায় বসেছেন। আলোচনায় বারবার উঠে আসছে একটি প্রশ্ন—ভারতের বিপক্ষে ১০ খেলোয়াড় নিয়ে ড্র করতে পারলে নেপালকে কেন হারানো যাবে না? প্রায় ১০ বছর ধরে জাতীয় দলে খেলা এক খেলোয়াড় বলছিলেন, ‘খেলোয়াড়দের মধ্যে এমন জয়ের ক্ষুধা আমি দেখিনি।’
বাংলাদেশকে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন মালদ্বীপপ্রবাসী বাংলাদেশিরাও। মালে জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে তাঁরা যেভাবে বাংলাদেশ…বাংলাদেশ…বলে চিৎকার করে, মনে হতেই পারে ঘরের মাঠে খেলছে বাংলাদেশ। কাজ ফেলে এসে গ্যালারিতে বসা দর্শকদের আনন্দ উপহার দিতে চায় বাংলাদেশ দল।
বাংলাদেশকে জেতার লক্ষ্যের সামনে নেপালের দুর্বল রক্ষণভাগ
পরিসংখ্যান পরিষ্কার, ফাইনাল খেলতে বাংলাদেশের প্রয়োজন জয় আর নেপালের প্রয়োজন ড্র। সাদাচোখে নেপালের কাজটি সহজ মনে হলেও কোচদের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। ১ পয়েন্টের জন্য খেলার চেয়ে জেতার পরিষ্কার লক্ষ্য থাকাটা দলকে বেশি অনুপ্রাণিত করে থাকেন বলে মনে করেন কোচরা, যে লক্ষ্য আজ প্রথমবারের মতো দুই স্ট্রাইকার নিয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে নেপালের রক্ষণভাগের ফাঁকফোকরও বের হয়ে এসেছে। সেটা ঢাকতে সর্বশেষ ম্যাচে দলের সেরা মিডফিল্ডার রোহিত চাঁদকেও খেলানো হয়েছে রক্ষণভাগে। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। আজ এমন বড় ম্যাচেও রোহিতকে অনভ্যস্ত পজিশনে খেলানো হলে তিনি কতটা সামাল দিতে পারবেন, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
রাকিবের ফিরে আসা
দুই হলুদ কার্ডের খড়্গে পড়ে সর্বশেষ মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচটি খেলা হয়নি বাংলাদেশ দলের সেরা ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেনের। তিনি না থাকায় মালদ্বীপের অনেক সুবিধা হয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছিলেন মালদ্বীপ কোচ আলী সুজাইন। আজ মোট ৭ দিনের বিশ্রাম পেয়ে পুরো চাঙা হয়ে ফিরছেন রাকিব। বাঁ প্রান্ত দিয়ে তাঁর দ্রুতগতিতে বল নিয়ে ওপরে উঠে যাওয়াটা যেকোনো দলের রক্ষণভাগের জন্য বিপজ্জনক। কৌশলগতভাবে পুরো আক্রমণে মনোযোগ দেওয়ার জন্য আজ আরও বেশি সুবিধা পাবেন তিনি। আজ নিয়মিত লেফটব্যাক ইয়াসিন আরাফাতের জায়গায় যে–ই খেলুক না কেন, তাঁর ইয়াসিনের মতো ওভারল্যাপিংয়ের মাধ্যমে ওপরে ওঠার সামর্থ্য কমই থাকবে। সে ক্ষেত্রে নিচে নেমে এসে রক্ষণ সামলানোর ভাবনা আজ কম করলেও চলবে রাকিবের।
মালের গরমে নেপালের অস্বস্তি
স্থানীয় সময়ে রাতে অনুষ্ঠিত হওয়া ম্যাচে মালদ্বীপের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে টুর্নামেন্টে শুভ সূচনা করেছে নেপাল। কিন্তু এর পর থেকেই টুর্নামেন্টে তাদের পারফরম্যান্সের অবনতি ফুটে উঠেছে। পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩-২ গোলে জিতলেও বিকেলে শুরু হওয়া ওই ম্যাচে হাঁসফাঁস করতে দেখা গিয়েছে নেপালি ফুটবলারদের। আর সর্বশেষ ভারতের কাছে ১-০ গোলে হারা ম্যাচটিতে নেপাল ৫ গোলে উড়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকত না। নেপালের কোচিং স্টাফরাই মনে করছেন, মালের গরম আবহাওয়া তাঁদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ যেখানে ৫ দিনের পূর্ণ বিশ্রাম নিয়ে ম্যাচ খেলতে নামবে, সেখানে ভারতের বিপক্ষে খেলার পর নেপাল বিশ্রাম পেয়েছে মাত্র ২ দিন।