যে কোনো প্রতিকূলতায় বাংলাদেশের পাশে আছে ভারত

featured20200623223832

২১ জুন বিশ্বজুড়ে ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালিত হয়েছে। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল-‘Yoga at Home-Yoga with Family (বাড়িতে যোগব্যায়াম-পরিবারের সঙ্গে যোগব্যায়াম)। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ও জনসমাগমের নতুন নিয়ম অনুসারে আমাদের ঘরে উদযাপন করতে হয়েছে এ দিবসটি।

কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী গত ২১ জুন তার বক্তব্যে আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক যোগ দিবস আমাদের সংহতির দিন। যোগাভ্যাস আমাদের একত্রিত করে, দূরত্বকে হ্রাস করে। আমাদের বাড়ির সীমানা থেকে যোগের মাধ্যমে আমরা নিজের সঙ্গে, পরিবারের সঙ্গে এবং সারা বিশ্বের মানুষের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি এবং একটি অনন্য অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে পারি।

আজ  যখন বিভিন্ন দেশ ও জনগণ কোভিড ১৯-এর কারণে সৃষ্ট প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছে, তখন আমরা আরও বেশি করে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের গুরুত্ব উপলব্ধি করছি। এর ফলে অনেকেই যোগ এবং আয়ুর্বেদের মতো প্রাচীন উপকারী অনুশীলনের দিকে ঝুঁকেছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, বিপাক ক্রিয়া জোরদার করা এবং শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা থেকে নিজেকে রক্ষা করা।

এগুলো সবার জন্য মূল উদ্বেগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন যোগিক আসনগুলো সুপরিচিত। প্রাণায়ামের মতো শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশলগুলো শ্বসনতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। এই কৌশলগুলো ও যোগাসনগুলোর নিয়মিত অনুশীলন রোগের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়তে সহায়তা করতে পারে।

ভারসাম্য ও সামগ্রিক জীবনযাত্রা মূলত যোগের অন্যতম মূল ধারণা। এটি আধুনিক জীবনযাপনের চাপ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। যোগব্যায়াম আমাদের জীবনের বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের মানসিক এবং শারীরিকভাবে স্থিতিশীল করে।

যোগের এই উপকারিতাগুলোর স্বীকৃতি হিসেবে, জাতিসংঘ ২০১৪ সালে ২১ জুনকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস ঘোষণা করে। প্রতি বছর যোগের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বাংলাদেশ হাজার হাজার মানুষ দিবসটি উদযাপনের জন্য ভারতীয় হাই কমিশনের অনুষ্ঠানে শামিল হয়। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম নানা রঙের ম্যাট বিছিয়ে বর্ণিল হয়ে উঠে। গত বছর আমাদের এই উদযাপনে অংশ নিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিসহ ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ।

এবছরও, আমরা সারা বাংলাদেশজুড়ে যোগব্যায়ামের প্রতি মানুষের উৎসাহ দেখে অভিভূত হয়েছি। ভারত সরকারের আয়ুষ মন্ত্রণালয় ‘আমার জীবন আমার যোগ’ নামে একটি অনলাইন ভিডিও ব্লগিং প্রতিযোগিতা শুরু করে।

প্রতিযোগিতার বাংলাদেশ সংস্করণ ‘আমার জীবন আমার যোগ-বাংলাদেশ’-এ আমরা অনেক প্রতিযোগী পেয়েছি যারা যোগব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার গভীর আগ্রহ পোষণ করেছে। ভারতীয় হাইকমিশন সাতদিনের একটি অনলাইন যোগ কর্মশালার পাশাপাশি বাংলাদেশের যোগভ্যাসকারীদের জন্য একজন প্রশিক্ষকের নেতৃত্বে প্রাণায়াম ও ধ্যান প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিল।

যে কোনো প্রতিকূলতায় ভারত সব সময় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সরকার এবং জনগণ কোভিড-১৯ দ্বারা সৃষ্ট প্রতিকূলতার বিরূদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

ভারত ও বাংলাদেশ কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিভিন্ন অনলাইন দক্ষতা বৃদ্ধির কোর্সের মাধ্যমে সর্বোত্তম অনুশীলনগুলো ভাগ করে নিচ্ছে। শুধু এই সপ্তাহেই কোভিড ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয়ে তিনটি কোর্স পরিচালিত হচ্ছে। এই দক্ষতা বৃদ্ধির কোর্সগুলো আমাদের প্রথম সারির স্বাস্থ্যকর্মীদের একে অপরের কাছ থেকে শিখতে এবং কোভিড-১৯ এর বিরূদ্ধে দৃঢ়ভাবে লড়তে সহায়তা করবে। নাগরিক হিসেবে আমাদের সম্মুখ যোদ্ধাদের সহায়তা করার সর্বোত্তম উপায় হলো নিজেকে সুরক্ষিত ও সুস্থ রাখা।

যোগব্যায়াম আমাদের একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার দিকে নিয়ে যায়। যে কেউ যোগাভ্যাস করতে পারেন। যোগাভ্যাসই পারে একটি স্বাস্থ্যকর পৃথিবী এবং ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের সন্ধানে মানবতাকে ঐক্যবদ্ধ করতে।  তথ্যমন্ত্রী মো. হাছান মাহমুদ ৬ষ্ঠ আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে তার বার্তায় উল্লেখ করেছেন যে, আমরা যোগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে পারি।

প্রকৃতপক্ষে, কেবল আমাদের নিজের স্বাস্থ্যের উন্নতি নয়, বরং আমাদের প্রিয়জনদেরও খেয়াল রাখা এখন সময়ের দাবি। যোগব্যায়াম, সচেতন ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মতো সহজ কাজগুলোর মাধ্যমে আমরা নিজেকে এবং আমাদের পরিবারকে রক্ষা করতে পারি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের প্রত্যেকের আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা সফল হবো ও বিজয় লাভ করবো।

রীভা গাঙ্গুলি দাশ: বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার।

Pin It