জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি ও মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের সঙ্গে শুক্রবার সন্ধ্যায় শেষ সাক্ষাৎ করেছেন স্বজনরা। এখন যে কোনো সময় তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।
এর আগে বুধবার কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন মাজেদ। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বৃহস্পতিবার তার আবেদন নাকচ করে দেন। ওই দিনই তার মৃত্যু পরোয়ানার ফাইল রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এই ফাইল কারা কর্তৃপক্ষের কাছেও পাঠানো হয়েছে। এরপর কারাবিধি ও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি আবদুল মাজেদ প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি যেহেতু আবেদন নাকচ করেছেন, তাই যে কোনো সময় তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।’
কারা অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য বিধি অনুযায়ী সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ। সরকার যেভাবে নির্দেশনা দেবে, সেভাবেই দণ্ড কার্যকর হবে। আসামির স্বজনরা গতকাল সন্ধ্যায় তার সঙ্গে কারাগারে শেষ সাক্ষাৎ করেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আবদুল মাজেদ ২৩ বছর ধরে কলকাতায় আত্মগোপনে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি গোপনে ঢাকায় আসেন। সোমবার রাত ৩টার দিকে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন হাকিম। এরপর বুধবার ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এম হেলাল চৌধুরী আসামির মৃত্যু পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করেন আবদুল মাজেদ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর আরও কয়েক খুনির সঙ্গে আবদুল মাজেদ প্রথমে লিবিয়ায় চলে যান। পরে জিয়াউর রহমান তাকে সেনেগাল দূতাবাসে চাকরি দেন। ১৯৮০ সালে দেশে ফিরে আসার পর তিনি বিআইডব্লিউটিসিতে যোগ দেন। সে সময় তিনি উপসচিব পদমর্যাদায় চাকরি করেন। পরে যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ে পরিচালক পদে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মাজেদ আত্মগোপনে চলে যান। তার স্ত্রী ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় বাস করছেন। তাদের চার মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
অনেক বাধা পেরিয়ে ২০০৯ সালের নভেম্বরে সর্বোচ্চ আদালত থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১১ জনের ফাঁসির রায় আসে। তাদের মধ্যে পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি কার্যকর করা হয়। তবে পলাতক থাকেন মাজেদসহ ছয়জন। এর মধ্যে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সময় পেরিয়ে গেছে। ফলে তার সামনে শুধু রাষ্ট্রপতির প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ অবশিষ্ট ছিল। মাজেদ এখন কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে রয়েছেন।