রক্তদান মহৎ কাজ হলেও কিছু পূর্বপ্রস্তুতিরও প্রয়োজন রয়েছে।
যে রক্তদান করছে তার কাছে বিষয়টা সাধারণ মনে হলেও রোগী এবং তার পরিবার পরিজনরাই জানেন রক্তদাতা তাদের কতটা উপকার করলেন।
কিছু রক্তের গ্রুপ দুর্লভ ঠিক, তবে প্রয়োজনের সময় সহজলভ্য গ্রুপের রক্তদানকারী খুঁজে পেতেও বেগ পেতে হয়। আর শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই রক্তের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ব্যবধান।
তবে মহান এই কাজ করার আগে চাই কিছু সাবধানতা ও প্রস্তুতি।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতের ইন্দ্রপৃষ্ঠ হাসপাতালের ‘ট্রান্সফিউশন মেডিসিন’, ‘মোলিকিউলার বায়োলজি’ এবং ‘ট্রান্সপ্লান্ট ইমিউনোলজি’ বিভাগের পরামর্শদাতা ডা. মোহিত চৌধুরির দেওয়া পরামর্শ অবলম্বনে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হল।
রক্ত এক ধরনের জটিল টিস্যু যা লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেতকণিকা, অনুচক্রিকা ও ‘প্লাজমা’য়ের মিশ্রণে গঠিত। দান করা রক্ত লোহিত রক্তকণিকা, অনুচক্রিকা, ‘প্লাজমা এবং ‘ক্রায়োপ্রিসিপিটেইট’য়ে বিভক্ত করা হয়।
এক ব্যাগ রক্ত থেকে বের করে আনা যায় কয়েকটি উপাদান। আর তাই বলা হয়, এক ব্যাগ রক্ত বাঁচাতে পারে তিনটি জীবন।
রক্তদানকারীরা সরাসরি রক্ত কিংবা রক্তের যে কোনো উপাদান দান করতে পারেন। রক্তের নির্দিষ্ট উপাদান দান করার জন্য বিশেষ যন্ত্রের প্রয়োজন হয় যা আমাদের দেশে খুব একটা সহজলভ্য নয়। আর রক্তের নির্দিষ্ট উপাদান দান করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘অ্যাফেরেসিস’।
সাধারণত একটি রক্তের ব্যাগে ৪৫০ মি.লি. লিটার রক্ত ধারণ করা যায়। আর এইটুকুই একজন রক্তদাতা একবারে দান করতে পারেন। মানুষের শরীরে রক্তে পরিমাণ নির্ভর করে তার ওজন, বয়স এবং উচ্চতার ওপর।
একজন মানুষ এক ব্যাগ রক্ত দান করার পর তার ওজন, বয়স এবং উচ্চতার ওপর ভিত্তি করে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই স্বাস্থ্যের উপর কোনোরকম প্রভাব ছাড়াই রক্তে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়।
রক্তদান করার জন্য দাতার বয়স অবশ্যই ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে। ওজন ৪৫ কেজির নিচে হলে ওই ব্যক্তি রক্তদান করতে পারবেন না। এছাড়াও যে কোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস কিংবা ছত্রাকজনীত রোগে আক্রান্ত থাকলেও ওই ব্যক্তি রক্তদান করতে পারবেন না।
গর্ভবতী ও বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন নারীরাও রক্তদান করতে পারবেন না।
রক্তদানের দুতিন ঘণ্টা আগে পরিপূর্ণ খাবার খাওয়া উচিত যাতে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে। যেহেতু শরীরের থেকে বেশ বড় মাত্রার তরল বেরিয়ে যাবে তাই রক্তদাতাকে পানি, শরবত ইত্যাদি পানীয় পান করতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে, যাতে রক্তচাপ কমে না যায়।
রক্তদান করার পর কফিযুক্ত পানীয় বর্জন করতে হবে আর খেতে হবে লৌহ ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার ও পানীয়।
দান করা রক্ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ব্যবহার করা হয়। তাই প্রতি ব্যাগ রক্তই ‘এইচআইভি’, ‘হেপাটাইটিস’, ‘সিফিলিস’ এবং অন্যান্য সংক্রমণে আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষা করা হয়।
রক্তদাতার মাধ্যমে গ্রহীতার শরীরের যাতে নতুন কোনো রোগের জীবাণু প্রবেশ করতে না দেওয়াই এই পরীক্ষাগুলোর উদ্দেশ্য।
গড় হিসেবে একজন মানুষ তিন মাস অন্তর অন্তর রক্তদান করতে পারেন। তবে রক্তের উপাদানের ক্ষেত্রে হিসেব ভিন্ন।
যেমন অনুচক্রিকা একজন তিন দিন পর পর দান করতে পারবেন, তবে এক বছরে সর্বোচ্চ ২৪ বার দান করা যাবে।
রক্তদানকে নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করা উচিত প্রতিটি সুস্থ মানুষের।