রনির রেলের আন্দোলন সরকারেরই কৌশল: ফখরুল

1659015183.Fukrul-BG

দেশ যে ‘সংকটে আছে’ তা থেকে মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরাতেই সরকার এমন নানা কৌশল নিচ্ছে বলে অভিযোগ বিএনপি মহাসচিবের।

রেলের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন তাতে সরকারেরই কৌশল দেখতে পাচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তার কথায়, “রনি ঠিকই প্রতিবাদী মিটিং শেষ করে গিয়ে আওয়ামী লীগের অফিসে গিয়ে ঢুকেছে। এটা হচ্ছে (সরকারের) বিভিন্ন কৌশল, ডাইভারশন।”

বৃহস্পতিবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ জানিয়ে ছয় দফা দাবিতে ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর টিকেট কাউন্টারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন মহিউদ্দিন রনি। পরে তাকে স্টেশনে ঢুকতে না দিলে তিনি শাহবাগেও কর্মসূচি পালন করেন।

গত ২৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার পর বিকালে রেল ভবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলোচনায় বসেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। চার ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠক শেষে ‘আপাতত’ তিনি আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।

আর ওই বৈঠকে রনির ছয় দফা দাবি নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি তাকে রেলের অংশীজন সভার প্রতিনিধি করা হয়েছে বলে জানান রেল সচিব হুমায়ুন কবির।

রনির প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে মহিউদ্দিন রনি আন্দোলন শুরু করেছিলেন। আমার স্ত্রী বলেছিলেন যে, দেখ কিভাবে কোনো রাজনীতি করে না, কিছু করে না- সেই ছেলে কত ভালো কাজ করছে আরকি। সব মানুষকে নিয়ে আসছে।

“আমি সেইদিনই তাকে (স্ত্রী) বলেছিলাম যে, দেখ খুব শিগগিরই দেখবে যে, এটা আওয়ামী লীগের একটা কৌশল, তা প্রমাণিত হবে।”

দেশ যে ‘সংকটে আছে’ তা থেকে মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরাতেই সরকার এমন নানা কৌশল নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

“সংকটের যে মূল জায়গাটা গণতন্ত্র নেই বলেই তো সাম্প্রদায়িক এই হামলা বারবার ঘটছে, গণতন্ত্র নেই বলেই মানুষের যে অধিকার সেই অধিকার রক্ষা করা যাচ্ছে না, গণতন্ত্র নেই বলেই আজকে জবাবদিহিতা নেই, পার্লামেন্ট নেই, যা খুশি লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে।

“লোড শেডিংয়ের কারণও তাই। এ বিষয়গুলো করার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমরা যাতে ডাইভারটেড হই, আসল জায়গা থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এই কাজগুলো করা হয়।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “বর্তমানের ক্রাইসিসটা কোথায়? ক্রাইসিসটা হচ্ছে যে, গণতন্ত্র পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। তার যে মূল রাস্তা বা ফটক যেটা ‘গেট ওয়ে টু ডেমোক্রেসি’ সেটা হচ্ছে নির্বাচন।

“এ নির্বাচনের দাবিতে গোটা দেশের মানুষ যখন একটাই কথা বলছে, এই দেশে কোনো নির্বাচন হতে পারে না যদি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকে। কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। খুব জোরেশোরে এই দাবি উঠেছে।”

বিএনপি ছাড়া নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না বলে সম্প্রতি সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, সেই প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, “নির্বাচন কমিশন নিজে এখন বলতে বাধ্য হচ্ছে যে, রাজনৈতিক একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে, সকল দলের অংশগ্রহণ না হলে সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।

“সেই সময়ে এই দাবিটাকে পাস কাটিয়ে দেওয়ার জন্য, তাকে দূরে রাখার জন্য এটাও তাদের একটা কৌশল। ডাইভারশন করা শুরু করেছে।”

‘আয় বেশি দেখাতেই জনসংখ্যা কম দেখানো হচ্ছে’

মাথাপিছু আয় বেশি দেখাতে সরকার দেশের জনসংখ্যা কম দেখাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “এই দেখেন- এখানে মাথাপিছু আয় বেশি দেখানোর জন্য জনসংখ্যা কম দেখানো হয়েছে। যেকোনো মানুষ বুঝবে যে, এখানে ১৮ কোটি আমরা হিসাব করি, আমাদের হিসাবে আসে প্রায় ১৮ কোটি মানুষ। সেখানে ১৬ কোটি মানুষ দেখালে তো মাথাপিছু আয় বেশি দেখানোর সুবিধা হবেই।”

জনশুমারি গণনা সঠিক হয়নি অভিযোগ করে তিনি বলেন, “একটা বাড়িতে গিয়ে দারোয়ানকে জিজ্ঞাসা করেছে যে, এই বাড়িতে কতজন লোক খায়? ও (দারোয়ান) তো এত সব বুঝে না। সে বলেছে যে, দিনের বেলা দুইজন খায়, রাতের বেলা চারজন খায়। এই যে বিষয়গুলো…এটা তো জনশুমারি হতে পারে না।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এসব করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা, প্রতারণা করা… পুরো সরকারটাই প্রতারণার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এটা একটা টোটালি ফেক গভার্মেন্ট।”

বুধবার ২০২২ সালের জনশুমারির তথ্য প্রকাশ করে সরকার বলছে, বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নড়াইলে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার তদন্ত টিমের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, সদস্য অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, অমলেন্দু দাস অপু ও অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী।

Pin It