রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে। রাজধানীতে দিনে গড়ে ৭৩ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র নিশ্চিত করেছে। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৭২০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ১৯ জন ঢাকার বাইরের বাসিন্দা। তবে আক্রান্তদের মধ্যে ২ হাজার ৯০০ রোগী সুস্থ হয়ে ইতিমধ্যে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
এ বিষয়ে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা হয়েছে। সবাই এ সম্পর্কে অবগত। হাসপাতালে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ জন্য ঢাকার বাইরে কেউ আক্রান্ত হলে তা জানা যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডেঙ্গু মশা প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এটিই একমাত্র উপায়। তবে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য সব সরকারি হাসপাতালকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ঢাকা কিংবা ঢাকার বাইরে কারও জ্বর হলে বিলম্ব না করে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রও মশা নিয়ে জনসাধারণকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ডেঙ্গু মশার বিস্তার রোধে যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, তা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ওই ওষুধে মশা মরছে না। এতে ডেঙ্গুর বিস্তার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
আক্রান্তের বাড়িতে মেয়র সাঈদ খোকন: স্ত্রী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে উকিল নোটিশ পাঠানোর একদিন পর সেই রোগীকে দেখতে গেছেন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলামের স্ত্রী সুমি আক্তার সম্প্রতি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। এ জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করে বৃহস্পতিবার ডিএসসিসির মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে আইনি নোটিশ পাঠান তানজিম। শনিবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত আইনজীবীর স্ত্রীকে দেখতে খিলগাঁওয়ে তাদের বাসায় যান মেয়র খোকন।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, একজন নাগরিক ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। সেটি করপোরেশনের আইনজীবীরা দেখবেন। কিন্তু আমি মনে করেছি, একজন মেয়র হিসেবে একজন সংক্ষুব্ধ নাগরিকের পাশে থাকা প্রয়োজন। সে মানবিক বোধ থেকে তার স্ত্রীকে দেখতে এসেছি।
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর কথা জানিয়ে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ডেঙ্গু মোকাবেলায় আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আশা করি, শিগগিরই নগরবাসীকে ডেঙ্গুমুক্ত শহর উপহার দিতে পারব। এ জন্য করপোরেশনের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতার ওপর জোর দেন তিনি।
নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডিএসসিসির মেয়র বলেন, আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। নগর কর্তৃপক্ষ আপনাদের পাশে আছে। রোববার থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম সাধারণ মানুষের সেবায় কাজ করবে। বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহ করবে। কেউ ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমের কাছে যেতে না পারলে নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করবেন। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা আপনার বাসায় চলে যাবেন।
পরে আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমার পাঠানো আইনি নোটিশটি শুধু ক্ষতিপূরণ নয়। এটি প্রতিবাদের একটি ভাষা। আমি চাই, আর কোনো নাগরিক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত না হোক। নগর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সচেতন থাকুক।
ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, শুক্রবার রাজধানীর ডেল্টা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রুমানা আফরোজা নামে এক মেডিকেল শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। গত সপ্তাহে তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। তিনি ডেল্টা মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার গালা গ্রামে। ঢাকার মিরপুর-১ নম্বরে সপরিবারে বসবাস করতেন রুমানা। শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়। এর পর তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৫টার দিকে মারা যান তিনি।