ঢাকার মোহাম্মদপুরে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে পেটানোর পর নগ্ন করে শত শত মানুষের সামনে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছে এক দল যুবক।
আওয়ামী লীগের ওই নেতার অভিযোগ, চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় তাকে এভাবে হেনস্তা করা হয়েছে।
ওই যুবকরা মোহাম্মদপুরের এক জনপ্রতিনিধির মদদপুষ্ট বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা জানিয়েছে।
এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার নেতারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যার পর আওয়ামী লীগ নেতা মনির হোসেনকে মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে শুধু অন্তর্বাস পরা অবস্থায় এনে শত শত লোকের সামনে ছেড়ে দিয়ে হৈ হুল্লোড় করতে করতে চলে যায় কয়েক যুবক।
মনির মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ১২ নম্বর ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ড শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়ালী উল্ল্যাহ মাস্টার।
মনির বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যার পর পূর্ব পরিচিত সালামসহ কয়েকজন একটি ঝামেলার বিষয়ে মিটমাট করার কথা বলে তাকে জাকির হোসেন রোডের বাসা থেকে ডেকে তাজমহল রোডের কবরস্থান মাঠে নিয়ে বসায়।
সেখানে তাকে ৫/৬জন ঘিরে ধরে এবং তারা কিছুক্ষণ মাদক সেবনের পর তার উপর চড়াও হয় বলে জানান তিনি।
“এসময় চারদিক কিছুটা অন্ধকার ছিল। তারা টাউন হল বাজার নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করার জন্য বলে এবং চড়থাপ্পড় মারতে থাকে। এরপর তারা আমার আন্ডারওয়্যার ছাড়া শরীরের সমস্ত কাপড় খুলে ফেলে এবং মোবাইল দিয়ে ছবি তোলে, ভিডিও করে। দিগম্বর অবস্থায় তারা মাঠ থেকে বের করে আনে এবং একটা রিকশায় তুলে টাউন হল বাজারে নিয়ে ছেড়ে দেয়।”
ওই বাজারেই কাঁচামালের ব্যবসা করেন মনির। ওই যুবকরা চলে গেলে পরিচিত একজনের সহায়তায় কাপড় জোগাড় করে থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন তিনি।
হামলাকারী হিসেবে সালাম, লাবু, দীপুসহ কয়েকজনের নাম বলেছেন মনির।
এদের কারও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এরা সবাই মোহাম্মদপুরেরই এক এক জনপ্রতিনিধির অনুসারী হিসেবে পরিচিত বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে লকডাউনের পর পুলিশের উদ্যোগে টাউন হল কাঁচাবাজারের বাইরের অংশ সরিয়ে পাশে শহীদ পার্ক মাঠে নেওয়া হয়।
মনিরের অভিযোগ, বাজারের উপর যাদের কর্তৃত্ব ছিল, তারা এটি আগের স্থানে ফেরাতে তৎপরতা চালাচ্ছে এবং এজন্য বলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকাও নিয়েছে।
“আমি এ চাঁদাবাজি প্রতিবাদ করেছিলাম এবং কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের বলেছিলাম,. কাউকে যেন টাকা না দেয়। এজন্য তারা আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়।”
ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী উল্ল্যাহ মাস্টার বলেন, “ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এটা মেনে নেওয়া যায় না। যারা এই কাজটি করেছে, তারা স্থানীয় চাঁদাবাজ এবং সন্ত্রাসী।”
তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “না হলে আমরা বৃহত্তর বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাকব।”
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি আমি শুনেছি, অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা।
“যারা একাজ করেছে, তাদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে বলেছি আমরা।”
তবে ২৪ ঘণ্টায়ও কাউকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি মোহাম্মদপুর থানায় যোগাযোগ করে।
থানার এসআই সানাউল হক জানান, “মনির হোসেনের করা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। যারা ঘটিয়েছে থানায় করা অভিযোগে তাদের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
“একই সাথে ঘটনার পেছনে পূর্বের কোনো শত্রুতা আছে কি না, তা জানার চেষ্টা চলছে।”