রাজপুত্র, রাজকন্যা, প্রধানমন্ত্রী কাউকেই ছাড়ছে না করোনা

bg20200330222432

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। ইতোমধ্যেই কাবু করে ফেলেছে বিভিন্ন দেশের রাজপুত্র, রাজকন্যা, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী-এমপি, সাংবাদিকসহ অনেক শ্রেণি-পেশার মানুষকে। প্রভাবশালী মার্কিন মুল্লুকে যেমন হানা দিয়েছে এই ভাইরাস, তেমনি বাদ যায়নি ব্রিটিশ রাজপরিবারও। একইসঙ্গে এর প্রভাবে প্রভাবশালী রাজনীতিকদের অনেকে ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। কেউ আবার বেছে নিয়েছেন আত্মহত্যার পথও।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, ২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলেও গোটা দুনিয়াকে বর্তমানে গ্রাস করে নেওয়ার পর্যায়ে চলে গেছে। দেশে দেশে জারি হয়েছে জরুরি অবস্থা, লকডাউন। তবু মোকাবিলা করা যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ নিয়ে নিয়েছে ঘাতক করোনা। আক্রান্ত করেছে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষকে। তাই বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে সবাই জোর দিচ্ছে- ‘সামাজিক দূরত্ব’ মেনে চলায়।

যুক্তরাষ্ট্র:
গত ১৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো করোনা ভাইরাস সংক্রমণে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হন দেশটির কংগ্রেসের দুই সদস্য। এদের একজন ফ্লোরিডা থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান দলীয় মারিও ডিয়াজ-ব্যালার্ট। আরেকজন উটাহ থেকে নির্বাচিত ডেমোক্রেট সদস্য বেন ম্যাকঅ্যাডামস।

এরপর গত ২২ মার্চ আক্রান্ত হন মার্কিন সিনেটর র‌্যান্ড পল। এছাড়া দেশটি ইতোমধ্যে করোনা মোকাবিলায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও যেন শান্ত করে দিয়েছে এই ভাইরাস। যেই ট্রাম্প বড়াই করে বলতেন, আমি যা জানি, তা আর কেউ জানে না, সেই তিনিই এখন সংবাদ সম্মেলনে আসছেন কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে।

ব্রিটেন:
ব্রিটেনের রাজপরিবারকেও ছাড়েনি করোনা। এমনকি কামড় দিয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রীকেও। বাদ যায়নি স্বাস্থ্যমন্ত্রীও।

গত ২৫ মার্চ ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বড় ছেলে প্রিন্স অব ওয়েলস চার্লস করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর প্রকাশ হয়। এরপর ২৬ মার্চ দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নিজেই আক্রান্ত হওয়ার খবর টুইট করে জানান। আবার ২৭ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানককও টুইটে জানান তিনি আক্রান্ত হয়েছেন।

কানাডা:
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দেশ কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ব্যক্তিত্বের কারণে যিনি সারা পৃথিবীতেই জনপ্রিয়, তার পরিবারও রক্ষা পায়নি করেনা ভাইরাস থেকে। ট্রুডোর স্ত্রী সোফি গ্রেগরি ট্রুডো গত ১২ মার্চ আক্রান্ত হলেও বর্তমানে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন।

স্পেন:
দেশটির রাজকুমারীকে একেবারেই রেহাই দেয়নি এই করোনা। ৮৬ বছর বয়সী মারিয়া টেরেসা করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে পেরে না ওঠায় ২৯ মার্চ মৃত্যবরণ করেছেন। এর আগে গত ২৫ মার্চ দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী কারমেন ক্যালভোও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তাকে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বর্তমানে।

জার্মানি:
করোনায় আক্রান্ত এক চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাতের পরিপ্রেক্ষিতে ২২ মার্চ বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর এবং প্রভাবশালী নারী জার্মান চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেলকে কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয়েছে। আর অর্থনেতিক মন্দার ভাবনায় একুল-ওকুল না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন দেশটির হেসে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী টোমাস শেফার। ২৮ মার্চ হেসে রাজ্যের ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে হোশেম নগরের রেললাইনের ওপর তার মরদেহ পাওয়া যায়।

এদিকে, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় হিমশিম খাওয়ায় নেদারল্যান্ডসের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্রুনো ব্রুইন্স পদত্যাগ করেছেন ২০ মার্চ। ২২ মার্চ একইপথে হেঁটেছেন কুয়েডরের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং শ্রমমন্ত্রীও।

প্রাণঘাতী করোনা ইতোমধ্যে কেড়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিবিএসের খ্যাতনামা সংবাদিক মারিয়া মেরক্যাডার প্রাণও। ২৯ মার্চ মারা যান ৫৪ বছর বয়সী এ সাংবাদিক।

তুমুল জনপ্রিয় জাপানি কমেডিয়ান কেন শিমুরাকেও ছাড়েনি কভিড-১৯। ২৯ মার্চ চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত সংক্রামক রোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে দ্রুত ছড়াচ্ছে। ফলে হাঁচি-কাশি শিষ্টাচার মেনে চলা এবং প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছে সংস্থাটি। আবার পরামর্শ রয়েছে সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়ারও।

Pin It