দেশের উন্নয়নে রাজস্ব আদায় বাড়াতে ভূমিকা রাখতে চান জেলা প্রশাসক ডিসিরা। এ জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডিসির নেতৃত্বে কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কৃষক এবং নারী উদ্যোক্তরা যাতে সহজে ঋণ পেতে পারেন, সে জন্য বিদ্যমান শর্তসমূহ আরও সহজ করার কথা বলেছেন ডিসিরা।
সোমবার ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রথম অধিবেশনে এসব প্রস্তাব উঠে এসেছে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, অর্থ বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং পরিকল্পনা বিভাগের সঙ্গে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের নিয়ে এ অধিবেশন হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, আইআরডির সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াসহ সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা এতে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ড. মসিউর রহমান।
দেশে রাজস্ব আয়ের দায়িত্ব পালন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ডিসিরা মনে করেন, একাজে তাদেরও ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। এজন্য প্রত্যেক জেলায় ডিসির নেতৃত্বে পৃথক কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এই কমটিতে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব করা হয়।
জানা যায়, বৈঠকে আইআরডির সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া ডিসিদের এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি ভালো প্রস্তাব। তবে মাঠ পর্যায়ে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম জোরদার করতে এনবিআরের একটি প্রস্তাব রয়েছে। এতে উপজেলা পর্যন্ত আয়কর অফিস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর জন্য বাড়তি জনবল নিয়োগ করা হবে। ফলে ডিসিদের দেওয়া নতুন প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। যাতে কোনো ধরনের সমন্বয়হীনতা তৈরি না হয়।
এ প্রসঙ্গে ড. মসিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ডিসিদের প্রস্তাব ছিল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করা, ডিসি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নিয়ে। তাহলে তারা আয়কর বাড়াতে সহায়তা করতে পারেন। রাজস্ব বোর্ড এটা ভালো প্রস্তাব বলে মনে করে। তবে প্রস্তাবের ভেতরে বিশদ কী আছে, আগে সেটা তাদের জানা দরকার।
তিনি আরও বলেন, রাজস্ব বিভাগকে সম্প্রসারণের একটি প্রস্তাব বর্তমানে সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। প্রস্তাবটি হলো: তাদের কর্মকর্তা বাড়ানো এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অফিসার নিয়োগ করা। এই দুটির সঙ্গে একটি সমন্বয় করা প্রয়োজন হবে। এই বিষয়টি আরও বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করতে হবে বলে জানান তিনি।
রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষিঋণ ও ক্ষুদ্র ঋণ বিতরন নিয়েও কথা বলেছেন ডিসিরা। এসব ঋণ পেতে স্থানীয়ভাবে পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। অনেক ক্ষেত্রে ঋণ পেতে নানা ধরনের জটিল শর্ত দেওয়া হয়। ফলে সময়মত ঋণ মেলে না। ডিসিরা বলেছেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষি ঋণ পেতে নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়। যেমন : ঋণ পেতে হলে মহিলাদের সনদ লাগে। গ্যারান্টার প্রয়োজন হয়। জামানতে দরকার হয়।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গ্রামে বেশিরভাগ নারীর জমি নেই। থাকলেও বাবা, মা কিংবা স্বামীর অনুমতি কিংবা সমর্থন লাগে। তাদের সহযোগিতা ছাড়া ব্যাংকে জমি বন্ধক রাখা সম্ভব হয় না। ডিসিরা এসব বাধার কথা বলেন এবং ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে উল্লিখিত শর্ত সহজ করার পরামর্শ দেন। ডিসিরা এক কোটি টাকা করে বরাদ্দ ও একটি ব্যাংক চেয়েছেন- একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মসিউর রহমান বলেন, প্রস্তাবটি সরকারি নথিতে আসবে। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে। তারপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মসিউর রহমান আরও বলেন, ডিসিরা যে সকল বিষয় উত্থাপন করেছেন, তার মধ্যে অধিকাংশই হলো ঋণ ও সরকারের ব্যয় বরাদ্দ কীভাবে মানুষের কাজে লাগানো যায় এবং দ্রুত দক্ষতার সঙ্গে বিতরণ করা যায় সে বিষয়ে।