টপ অর্ডার দুর্দান্ত ভিত গড়ে দেওয়ার পর বাকিরা জ্বলে ওঠায় বিশাল সংগ্রহ গড়েছিল ভারত। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রাণপণে লড়াই করল অস্ট্রেলিয়া, কিন্তু তা রান তাড়ার রেকর্ড গড়ার জন্য যথেষ্ট হয়নি। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সহজেই হারিয়ে বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় জয় পেল বিরাট কোহলির দল।
লন্ডনের দা ওভালে রোববার ৩৬ রানে জিতেছে ভারত। ৩৫২ রান তাড়ায় ৩১৬ রানে অলআউট হয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া।
ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথের ফিফটিতে লড়াই করে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু তিন বলের মধ্যে স্মিথ ও মার্কাস স্টয়নিসকে ফিরিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন ভুবনেশ্বর কুমার। শেষের দিকে ঝড়ো ফিফটিতে পরাজয়ের ব্যবধান কমান অ্যালেক্স কেয়ারি।
অস্ট্রেলিয়াকে অনেকবার ভোগানো ধাওয়ান ও রোহিতের উদ্বোধনী জুটি এদিন শুরু থেকে ছিল সাবধানী। আক্রমণ থেকে দুই গতিময় পেসার মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স সরে যাওয়ার পর বাড়ে রানের গতি। ন্যাথান কোল্টার-নাইলকে সপ্তম ওভারে টানা তিনটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ডানা মেলেন ধাওয়ান। রানের গতিতে দম দেওয়ার কাজটা করেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
ধীরে ধীরে নিজেকে ফিরে পান আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান রোহিত। জমে যায় জুটি। ১৯তম ওভারে তিন অঙ্ক স্পর্শ করে জুটি ও দলের রান। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রোহিত-ধাওয়ানের এটি ষষ্ঠ শতরানের জুটি।
শুরুতে রোহিতের কঠিন একটি ক্যাচ হাতছাড়া করেছিলেন কোল্টার-নাইল। এই পেসারই শেষ পর্যন্ত থামান ডানহাতি ওপেনারকে। ৭০ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ৫৭ রান করেন রোহিত।
কোহলির সঙ্গে ৯৭ রানের আরেকটি ভালো জুটি উপহার দেন বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া ধাওয়ান। স্টার্কের বলে সীমানায় ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ১১৭ রানের ইনিংস। ওয়ানডেতে ১৭তম সেঞ্চুরি পাওয়া বাঁহাতি এই ওপেনারের ১০৯ বলের ইনিংস গড়া ১৬ চারে।
রানের গতি বাড়াতে প্রমোশন পেয়ে চার নম্বরে নামা হার্দিক পান্ডিয়া প্রথম বলেই ক্যাচ দিয়েছিলেন। গ্লাভসে বল জমাতে পারেননি অ্যালেক্স কেয়ারি। সুযোগ দারুণভাবে কাজে লাগান এই অলরাউন্ডার। ২৭ বলে তিন ছক্কা ও চারটি চারে খেলেন ৪৮ রানের এক ইনিংস।
পান্ডিয়ার সঙ্গে ৮১ রানের জুটি উপহার দেওয়া কোহলি ওয়ানডেতে তুলে নেন পঞ্চাশতম ফিফটি। বিশ্বকাপে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো কোনো ম্যাচে পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেললেন ভারতের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান।
ক্রিজে গিয়েই শট খেলতে শুরু করেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। এই সময় কোহলি কমই পেয়েছেন স্ট্রাইক। ১৪ বলে খেলা ধোনির ২৭ রানের ঝড়ো ইনিংস শেষ হয় মার্কাস স্টয়নিসের দুর্দান্ত এক ফিরতি ক্যাচে। শেষ ওভারে ছক্কার চেষ্টায় শেষ হয় কোহলির ৮২ রানের ইনিংস।
শেষ বলে চার হাঁকিয়ে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষ প্রথম সাড়ে তিনশ ছোঁয়া সংগ্রহ এনে দেন লোকেশ রাহুল। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে বিশ্বকাপে আগের সর্বোচ্চ ছিল গত আসরে শ্রীলঙ্কার করা ৩১২। ভারতের আগের সেরা ছিল ১৯৮৭ আসরে ৬ উইকেটে ২৮৯।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৫০ ওভারে ৩৫২/৫ (রোহিত ৫৭, ধাওয়ান ১১৭, কোহলি ৮২, পান্ডিয়া ৪৮, ধোনি ২৭, রাহুল ১১*, কেদার ০*; কামিন্স ১০-০-৫৫-১, স্টার্ক ১০-০-৭৪-১, কোল্টার-নাইল ১০-১-৬৩-১, ম্যাক্সওয়েল ৭-০-৪৫-০, জ্যাম্পা ৬-০-৫০-০, স্টয়নিস ৭-০-৬২-২)
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ৩১৬ (ওয়ার্নার ৫৬, ফিঞ্চ ৩৬, স্মিথ ৬৯, খাওয়াজা ৪২, ম্যাক্সওয়েল ২৮, স্টয়নিস ০, কেয়ারি ৫৫*, কোল্টার-নাইল ৪, কামিন্স ৮, স্টার্ক ৩, জ্যাম্পা ১; ভুবনেশ্বর ১০-০-৫০-৩, বুমরাহ ১০-১-৬১-৩, পান্ডিয়া ১০-০৬৮-০, কুলদীপ ৯-০-৫৫-০, চেহেল ১০-০-৬২-২, কেদার ১-০-১৪-০)
ফল: ভারত ৩৬ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: শিখর ধাওয়ান