অমিত শাহ এবং রাহুল গান্ধী- দুই শিবিরের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। উভয়ই ভারতের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের সভাপতি। জাতীয় নির্বাচনে কংগ্রেস সভাপতি রাহুলের অভিজ্ঞতা থাকলেও এবারই অভিষিক্ত হলেন ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি অমিত।
এর আগে বিধানসভা নির্বাচনে চারবারের বিধায়ক তিনি। জাতীয় নির্বাচনের মঞ্চে দলকে নেতৃত্ব দেয়ার পাক্কা হাত তার। আজ (মঙ্গলবার) তৃতীয় ধাপের ভোটে এ দুই নেতার দিকেই নজর থাকবে সবার। নিজেদের দুর্গে পৃথক ধাঁচের অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি হবেন রাহুল-অমিত।
কেরালার কংগ্রেস ঘাঁটি ওয়ানাড়ে লড়ছেন রাহুল। তাকে টেক্কা দিচ্ছেন বাম দলের প্রার্থীরা। আর খাসতালুক গুজরাটের গান্ধিনগরে লড়ছেন অমিত শাহ। তার বিরুদ্ধে প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেস বিধায়ক ডা. সি জে চ্যাড্ডা।
এনডিটিভি জানায়, তৃতীয় দফার ভোটে দেশজুড়ে ১৩টি রাজ্য এবং ২টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের মোট ১১৬টি আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে। এদিকে ৩য় দফায় শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার লক্ষ্যে বেশ তৎপর ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই)। আগের দুই ধাপে পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ-সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আর এ জন্য এ রাজ্যেই বেশি নজর দিয়েছে ইসিআই। প্রতিটি ভোটবুথে আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করেছে কমিশন।
তৃতীয় দফার ভোট গ্রহণ পর্বে দেশজুড়ে একগুচ্ছ হেভিওয়েট প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন ভোটাররা। ভেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে আছেন রাহুল গান্ধী, অমিত শাহ ছাড়াও সমাদবাদী পার্টির নেতা মুলাময় সিং যাদব, আরজেডি নেতা শরদ যাদবসহ আরও একাধিক প্রথম সারি নেতা। গুজরাটের গান্ধিনগরে লড়ছেন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ। এ আসনে টানা পাঁচবারসহ ছয়বারের এমপি লালকৃষ্ণ আদবানি। তাকে কিছুটা জোর করেই এবার অবসরে পাঠানো হয়েছে।
ফলে এ আসন থেকেই এবার জাতীয় নির্বাচনে অভিষেক ঘটেছে অমিতের। এর আগে ওই আসনে চারবার বিধায়ক নির্বাচিত হন তিনি। দু’বছর আগে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে গান্ধিনগর থেকে জিতেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস বিধায়ক ডা. সি জে চ্যাড্ডা গান্ধিনগরে অমিত শাহকে টেক্কা দিচ্ছেন। বিজেপির দুর্গ খ্যাত এ আসনে স্বাভাবিকভাবেই অভিষিক্ত অমিত শাহের জন্য অগ্নিপরীক্ষা হয়েই দেখা দিয়েছে।
এদিকে কেরালার ওয়ানাড় থেকে লড়ছেন রাহুল গান্ধী। ২০০৯ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে জিতেছেন প্রয়াত এমপি এমআই সানাভাস। তার মৃত্যুতে চিন্তিত হয়ে পড়ে কংগ্রেস। তাদের এ ঘাঁটিটি হারাতে চায়নি দল। তাই কংগ্রেস সভাপতি নিজেই সেখানে প্রার্থী হয়েছেন। যদিও এ নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। অনেকে বলেন, রাহুল পদ্ম শিবিরের কোনো দুর্গে প্রার্থী হতে পারতেন। তবে রাহুলের এ সহজ জয়ে বাগড়া দেয়ার চেষ্টা করছেন বাম প্রার্থীরা।
তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (সিপিআই) পিপি সুনীর। রয়েছেন লেফট ডেমোক্রেটি পার্টির প্রার্থীও। বামদের পাশ কাটিয়ে রাহুল নিজেদের জেতা আসন লুফে নিতে পারবেন কিনা সেটা এখন দেখার বিষয়। উত্তর প্রদেশের আমেথি থেকেও প্রার্থী হয়েছেন তিনি।
তৃতীয় পর্বে মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর, মালদহ উত্তর, মালদহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট- পশ্চিমবঙ্গের এ পাঁচটি আসনে ভোট হবে। এ আসনগুলো ঘিরে শাসক দল তৃণমূল ও বিরোধী দল বিজেপির জোর লড়াইয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম দুই দফা নির্বাচনের পর তৃণমূল এবং বিজেপি পৃথকভাবে দাবি করেছে, ওই আসনে তারাই জিতছে।
বর্তমানে মালদহ উত্তরে ক্ষমতায় আছেন সদ্য তৃণমূলে যোগ দেয়া সাবেক কংগ্রেস সংসদ সদস্য বেনজির মৌসম নূর। মালদহ দক্ষিণে রয়েছেন কংগ্রেস সংসদ সদস্য আবু হাসেম খান চৌধুরী, জঙ্গিপুরে কংগ্রেস সংসদ সদস্য ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ছেলে অভিজিৎ মুখার্জি, বালুরঘাটে তৃণমূলের অর্পিতা ঘোষ এবং মুর্শিদাবাদে বামফ্রন্টের সিপিএম সংসদ সদস্য বদরুদ্দোজা খান। এবার পাঁচটি আসনই চাইছেন মমতা। তিনি এ নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন। মমতা বলেছেন, এই পাঁচ আসন জিতলেই তৃণমূল এবার ৪২টি আসনই পাবে। দিল্লিতে মোদিকে হটিয়ে নতুন সরকার গড়ার কারিগর হবেন তিনি।
এ রাজ্যের দিকে জোর নজর দিয়েছে ইসিআই। পশ্চিমবঙ্গের পাঁচ কেন্দ্রের ভোটে কমিশন ৩২৪ কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েন করছে বলে বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে জানিয়েছেন। তিনি জানান, মালদায় ৯২ শতাংশ এবং বালুরঘাটে ৮০ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী থাকবে। এ ছাড়া রাজ্যের ৭ পুলিশ কমিশনকে রদবদল করেছে ইসিআই।
প্রধানমন্ত্রীকে ‘চোর’ বলায় সুপ্রিমকোর্টে ক্ষমা চাইলেন রাহুল : ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এবার চোর বলছে সুপ্রিমকোর্টও’- নির্বাচনী প্রচারে এমন মন্তব্য করায় হলফনামা দিয়ে শীর্ষ আদালতে ক্ষমা চাইতে হল রাহুল গান্ধীকে। বিরোধীরা তার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করেছে বলে এদিন দাবি করেন তিনি। চলতি বছরের ১০ এপ্রিল রাফাল মামলার রিভিউ পিটিশন মঞ্জুর করে শীর্ষ আদালত। ফাঁস হয়ে যাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেও ফের শুনানি শুরু করা যায় বলে জানায় সুপ্রিমকোর্ট।
এরপর রাহুল বলেন, ‘আমি প্রথম থেকেই বলছি, এবার সুপ্রিমকোর্টও মেনে নিল যে চৌকিদার নরেন্দ্র মোদি চোর হ্যায়।’ তার এ মন্তব্যের পরই তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে মামলা করেন বিজেপি নেত্রী মিনাক্ষী লেখি। সোমবার সুপ্রিমকোর্টে হলফনামা দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন রাহুল। তিনি নির্বাচনী প্রচারে উত্তেজনার বশে এ কথা বলে ফেলেন বলে জানিয়েছেন।