বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রচেষ্টায় নিউইয়র্কের আদালতে এ মাসেই মামলা করা হবে বলে জানিয়েজন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে এ মামলায় কাকে বিবাদী করা হবে, তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানান তিনি।
রোববার সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থ ফেরত আনতে করণীয় ঠিক করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
আন্তর্জাতিক আদালতের আইন অনুযায়ী, রিজার্ভ চুরির মামলাটি ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে করার সময়সীমা নির্ধারিত আছে। তা না হলে জটিলতা বাড়বে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আশস্ত করতে পারি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই মামলা হবে। তিনি আরও বলেন, মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছি। এটি দেখভালের জন্য বাংলাদেশের একজন আইনজীবী রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রেও একজন আইনজীবী আছেন। তারা যৌথভাবে ঠিক করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই মামলা করবেন। তবে কার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে, কতজনকে আসামি করা হবে এবং সাক্ষী কারা হবেন- এসব বিষয় দুই দেশের আইনজীবীরা বসে ঠিক করবেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যুক্তরাস্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক (ফেড) এবং ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন প্রক্রিয়াগত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, মামলার ব্যাপারে আলোচনা করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। দেশে ফিরে মামলা করার প্রক্রিয়া নিয়ে এগোচ্ছেন তারা।
২০১৬ সালের ৪ ফ্রেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব হ্যাক করে ভুয়া পেমেন্টের অর্ডারের বিপরীতে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে শ্রীলংকায় যাওয়া দুই কোটি ডলার বিতরণ হওয়ার আগেই ফেরত পায় বাংলাদেশ। আর ফিলিপাইনে যাওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি ডলার ফেরত এলেও বাকি ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার ফেরত পাওয়া যায়নি। অবশিষ্ট টাকা ফেরত পাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এর অংশ হিসেবে মামলা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
রোববার সংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটেছে নিউইয়র্কে। তাই মামলা সেখানেই হবে। বাংলাদেশে একজন আইনজীবী আছেন। ঠিক তেমনি নিউইয়র্কেও একজন কাজ করছেন। তারা দিনক্ষণ (টাইম ফ্রেইম) ঠিক করবেন। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি চলছে। যৌথভাবে নির্দিষ্ট সময় ঠিক করার পরই মামলা করা হবে।
রিজার্ভ চুরি পর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল। কমিশন রিপোর্ট দিলেও এখন পর্যন্ত তা প্রকাশ করা হয়নি। এটি প্রকাশ করা হবে কি-না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজন হলে প্রকাশ করব, না হলে নয়। তদন্তে নেগেটিভ বা পজেটিভ কী আছে, জানি না। ঢাকায় বসে কে কী কমিটি করল, কে কী রিপোর্ট দিল, তা নিয়ে আলোচনার জন্য এখন সঠিক সময় না।
নিউইর্য়কে যে আইনজীবী মামলা লড়বেন, তিনি বেশি কমিশন দাবি করেন। তাকে দিয়ে মামলা করা হবে কি-না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক আইনজীবীর একটি নির্দিষ্ট কমিশন থাকে। তবে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।