বিচারকাজ এগিয়ে নিতে ফিলিপিন্সের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িতদের নাম চেয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার ঢাকায় ফিলিপিন্সের সঙ্গে সচিব পর্যায়ের দ্বিতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) সভায় তাদের নাম ও আর্থিক তথ্য চাওয়া হয়।
সভা শেষে পররাষ্ট্র সচিব (এশিয়া ও প্যাসিফিক) মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা কয়েকটি বিষয়ে ওদের কাছে সাহায্য চেয়েছি। একটি হচ্ছে, কয়েকজন অপরাধীর পরিচয়। এই তথ্যটা তারা এখনও আমাদের সঙ্গে শেয়ার করে নাই। সেটা আমরা ওদের কাছে চেয়েছি।
”এছাড়া কিছু আর্থিক তথ্যের বিষয় আছে। সেটাও তারা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।”
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়।
পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এ অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া দুই কোটি ডলার ফেরত আসে। তবে ফিলিপিন্সে যাওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলার জুয়ার টেবিল ঘুরে হাতবদল হয়। এই অর্থ চুরিতে দেশের ভেতরের কোনো একটি চক্রের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়।
খোয়া যাওয়া রিজার্ভের অর্থের দেড় কোটি ডলার ফেরত এলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তৎপরতা চালানো হলেও এখনও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে রিজার্ভের অর্থ চুরির এই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন।এ মামলায় তদন্তকারী সংস্থা সিআইডিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে আদালত ৩০ বারের বেশি সময় দেওয়ার পরও তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েনি।
এছাড়া রিজার্ভ চুরি নিয়ে ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতে আরেকটি মামলা করেছে বাংলাদেশ।
অপরাধীদের নাম ও আর্থিক তথ্যগুলো পেলে রিজার্ভ চুরি নিয়ে বাংলাদেশে চলা মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ায় সুবিধা হবে বলে মন্তব্য করেন সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
কবে নাগাদ এসব তথ্য আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সময় সীমা ঠিক হয়নি। ফিলিপিন্সের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের কাছে এই তথ্য জমা আছে। ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের অনুমতি সাপেক্ষে তারা এটি আমাদের সাথে শেয়ার করবে। তারা আমাদের কথা দিয়েছে যে, করবে।”
মাসুদ বিন মোমেন জানান, ফিলিপিন্সের আদালতে আরসিবিসিকে করা ২০ মিলিয়ন ডলার জরিমানার টাকা বাংলাদেশ চাইলেও এ বিষয়ে ওই পক্ষ ভিন্নতম দিয়েছে।
”ওরা বলছে যে, ২০ মিলিয়ন ডলার, এই টাকা তারা ফাইন করেছে ওদের দেশের যে ব্যাংকিং ল আছে, তা ভায়োলেট করার কারণে। সুতরাং এটার সাথে আমাদের যে টাকাটা হারিয়েছে, সেটার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক নাই। কিন্তু আমরা দাবি জানিয়ে যাচ্ছি যে, আমাদের এটা অন্তত তোমরা দিতে পার। কারণ, আমাদের রিজার্ভ চুরি যাওয়ার কারণেই ওই জরিমানা করা হয়েছে।”
সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক ও ফিলিপিন্সের আরসিবিসির প্রতিনিধিরা মঙ্গলবার পৃথক বৈঠক করেছেন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
”উনারা যথেষ্ট সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে কীভাবে আরও সহযোগিতা করা যায়, সে ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।”
মাসুদ বিন মোমেন জানান, প্রায় চার বছর পরে এই দ্বিতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৮ মাসে একবার যেন এই বৈঠক হয়, সে বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুদেশের সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে দুই দেশের একই ধরনের অভিজ্ঞতা বা পরিস্থিতি। এসব ক্ষেত্রে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে পারি।
”এছাড়া ফিলিপিন্সের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নার্সিং, সিমেন্ট, কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এসব খাতে বিশেষ সুবিধা রয়েছে। এসব বিষয়ে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।”
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক এবং স্মারকের ড্রাফট (খসড়া) হস্তান্তর হয়েছে বলেও জানান মাসুদ বিন মোমেন।
তিনি জানান, বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আসিয়ানের মধ্য থেকে ফিলিপিন্স যেন কাজ করে, সেই সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় অনুষ্ঠিত সভায় ফিলিপিন্স প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের সহকারী সচিব মেইনার্দো এল বি মন্টিলেগরি।