রিজার্ভ থেকে উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ, প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

pm-ecnec-060720

দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ থাকায় মহামারীকালে সেখান থেকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণ দেওয়া যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার একনেক সভায় আলোচনার সময় তিনি এই প্রস্তাব দেন বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সভার পর এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে চিন্তাভাবনা করতে বলেছেন সরকার প্রধান।

বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ চূড়ায় রয়েছে। তিন দিন আগে তা ৩৬ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়।

প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে নয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

মহামারীকালে এক দিনে অর্থনীতির দুই সূচকে রেকর্ড

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়।

সে হিসাবে বাংলাদেশের এখন অনেক বেশি রয়েছে। এই অর্থ অলস না রেখে তা বিনিয়োগে আনতে অনেকদিন ধরেই অর্থনীতিবিদরা পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন।

এখন করোনাভাইরাস মহামারীতে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিই যখন বিধ্বস্ত, তখন তা কাজে লাগানোর উপর নজর দিলেন প্রধানমন্ত্রী।

পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, “বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা বিদেশিদের কাছ থেকে ডলারে ঋণ নিই। আমাদের রিজার্ভ এখন ৩৬ বিলিয়ন ডলার। এখান থেকে আমরা ঋণ নিতে পারি কি না? বাংলাদেশ ব্যাংক জনগণের পক্ষে এই টাকা সংরক্ষণ করে। ওখান থেকে আমরা প্রকল্পের জন্য ঋণ নিতে পারি।

“এসময় তিনি আরও বলেছেন, বিদেশ থেকে আমরা যে সুদে ঋণ আনি তা একটু কম হলেও দেশের টাকা ব্যবহার করলে লাভটা দেশেই থাকবে।
“তার নির্দেশনা হল যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে। কীভাবে এটা করা যায়, তা খুটিনাটি দেখবে। অর্থনীতিতে এর প্রভাব কী হতে পারে, তা খতিয়ে দেখতে পারে,” বলেন মান্নান।

তিনি প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাবের প্রশংসা করে বলেন, তিনি অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী ও যুগান্তকারী মন্তব্য করেছেন।

“প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সাধারণত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে বিদেশি টাকা হাতে রাখা যে কোনো অর্থনীতিতে সেইফ এবং স্বস্তিদায়ক মনে করা হয়। এখন প্রায় এক বছরের আমদানি ব্যয় আমরা মেকআপ করতে পারব।”

“সুতরাং তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মনে করেন যে, আমদানির ব্যয়ের একটা ‍যুক্তিসংগত পরিমাণ হাতে রেখে রিজার্ভের বাকিটাকে আমাদের অভ্যন্তরীণ ঋণ নিজেদের অর্থ নিজেরা ঋণ নিতে পারি,” বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, “আমরা যেসব দাতা সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিই, অনেক সময় তাদের নানা রকম শর্তের কারণেও প্রকল্পের কাজ সমস্যায় পড়ে। দেশি অর্থায়ন হলে সেই সমস্যাও থাকবে না।

“এসময় (সভায়) আমি একটা মন্তব্য করেছিলাম যে যারা ঋণ নেবে সংশ্লিষ্ট সংস্থা যেমনভাবে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নেবে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করবে। এখন সরকার সিদ্ধান্ত নেবে কীভাবে কী করা যায়।”

মান্নান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এজন্য সেন্ট্রাল ব্যাংক এবং অর্থ বিভাগ নিয়ম কানুন নীতিমালা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে। আর আমরা পরিকল্পনার দিক দিয়ে সহায়তা দেব।”

Pin It