পুলিশের ঢাকা রেঞ্জ জনসেবায় মডেল। ‘ঘুষ লেনদেন, হয়রানি, ডিউটি অফিসারের অসংলগ্ন প্রশ্ন, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) ভীতিকর আচরণ ও সাধারণ মানুষকে নাজেহাল করা’ এই রেঞ্জের অধীন থানাগুলোয় এসব দৃশ্য এখন আর দেখাই যায় না। পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ১৩টি জেলার ৯৬টি থানাকে রিমোট মনিটরিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় আনা হয়েছে। থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষ, হাজতখানা এবং সেন্ট্রি ডিউটি পোস্ট ২৪ ঘণ্টা ভার্চুয়ালি মনিটরিং হচ্ছে ডিআইজি অফিস থেকে।
এই তিন স্থানকে ঘিরেই আবর্তিত হয় থানার মূল কার্যক্রম। অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং দায়িত্বে অবহেলাসহ দীর্ঘদিন ধরে নানা অভিযোগ এসব স্থানকে কেন্দ্র করেই। কিন্তু এখন আর সেই সুযোগ নেই। ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে বসানো হয়েছে ‘অপারেশন্স কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার’। গত ২ ডিসেম্বর এই কন্ট্রোল সেন্টার উদ্বোধন করেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা রেঞ্জের অধীন থানাগুলোকে কঠোর মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। জিডি বা মামলা হওয়ার পর বাদীকে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার পক্ষ থেকে ফোন করা হচ্ছে। মনিটরিংয়ে ঘুষ, হয়রানি ও নাজেহাল হওয়ার ব্যাপারে বাদীদের জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। মনিটরিংয়ের শুরুতে নানা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তবে এখন সেগুলো কমে আসছে। জিডি ও মামলা করার ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেন ও হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে। পুলিশের ঢাকা রেঞ্জে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে অপারেশন্স কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার। এর মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা ৯৬টি থানার কার্যক্রম সরাসরি মনিটর করছেন রেঞ্জের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান জানান, আমরা যে প্রযুক্তিটি চালু করেছি সেটি বাংলাদেশ পুলিশের আধুনিকায়নে বিস্ময়কর সাফল্য। প্রত্যেক থানার ৩০ দিনের ভিডিও রেকর্ড সংরক্ষিত থাকবে অপারেশন্স কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টারে। ক্যামেরাগুলোতে জুম ক্যাপাসিটি আছে। এর মাধ্যমে ছবি বা ভিডিওকে বড় করে দেখা যায়। তিনি বলেন, পুলিশের সেবা দানের মূল কেন্দ্র হলো থানা। তাই পুলিশের সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে মনিটরিংয়ের বিকল্প নেই।
অপারেশন্স কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার থেকে উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করা হচ্ছে থানাগুলোকে। থানার ডিউটি অফিসার, হাজতখানা এবং সেন্ট্রিবক্সে বসানো আছে নাইট ভিশন মালটিকালার আইপি ক্যামেরা। এসব ক্যামেরার ফুটেজ সরাসরি দেখা যাচ্ছে অপারেশন্স কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার থেকে। সেখান থেকেই ক্যামেরা ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে আশপাশের দৃশ্যও দেখতে পাচ্ছে রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়। যখনই কোনো থানার কার্যক্রমে অসংগতি চোখে পড়ছে, তখনই তার স্ক্রিনশট নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। হিকভিশন ব্র্যান্ডের ইজেটভিআইজেট ক্যামেরার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্য এবং সেবাপ্রার্থীর সঙ্গে লাইভ কথা বলছেন সেন্টারের কর্মকর্তারা। সেন্টারে কর্মরত কর্মকর্তারা কথা বলার পাশাপাশি থানার লাইভ ভিডিও দেখতে পেলেও থানার পুলিশ সদস্যরা কোনো ভিডিও ফুটেজ দেখতে পান না। তাই কোনো অসামঞ্জস্য দেখে যখন রেঞ্জ অফিস থেকে কথা বলা হচ্ছে তখন অনেক ক্ষেত্রেই চমকে উঠছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা।
বর্তমান আইজিপির ভিশন অনুযায়ী, পুলিশই হবে জনগণের প্রথম ভরসার স্থল। তার পাঁচটি মূলনীতির মধ্যে তিনটি হলো—দুর্নীতিমুক্ত পুলিশি সেবা, নিপীড়ন ও হয়রানিমুক্ত পুলিশি সেবা এবং পুলিশের বৃহত্তর কল্যাণ, শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা বাস্তবায়ন। অপারেশন্স কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টারের মাধ্যমেই এই তিনটি মূলনীতি পুরোপুরি মনিটরিং সম্ভব। ঢাকা রেঞ্জের অরগানোগ্রাম অনুযায়ী কন্ট্রোলরুমে থাকবে এক জন ইন্সপেক্টর, এক জন এসআই ও দুই জন কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করবেন। অতিরিক্ত ডিআইজি (অপস অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স) ও অতিরিক্ত এসপি (অপস অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স) তদারকি করবেন। ইন্সপেক্টর (অপারেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল) অফিস সময়ে কন্ট্রোল রুমে অবস্থানপূর্বক সার্বক্ষণিক ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। রেঞ্জ কার্যালয়ের পুলিশ পরিদর্শক থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ের অফিসারগণ নির্দেশক্রমে এ কার্যক্রম তদারকি করবেন। অতীব জরুরি তথ্য সরাসরি রেঞ্জ ডিআইজিকে অবহিত করতে হবে।