বঙ্গবন্ধুর খুনি রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের ভারতে আটক হওয়ার খবরের সত্যতা দুই মাসেও নিশ্চিত হতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার। আসলেই তিনি ধরা পড়েছেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন দেশের গোয়েন্দারা।
বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি আব্দুল মাজেদ গ্রেপ্তার এবং তার ফাঁসি কার্যকরের মধ্যে গত এপ্রিলের মাঝামাঝিতে রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেমের গ্রেপ্তারের খবরটি কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজারে এলে করোনাভাইরাস মহামারীকালেও তা উঠে আসে আলোচনায়।
বুধবার জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “এখনও ভারতে তার গ্রেপ্তারের ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি।”
গ্রেপ্তারের খবর দেওয়ার পর আনন্দবাজার ভারতীয় একটি গোয়েন্দার সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছিল, মোসলেম উদ্দিনের নিকট আত্মীয়দের জিনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে সত্তরোর্ধ্ব এক ব্যক্তিকে বাংলাদেশি গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বুধবার জিজ্ঞাসায় বলেন, “এর কোনো সত্যতা এখন পর্যন্ত নেই।”
বঙ্গবন্ধুর এই খুনিকে গ্রেপ্তারের কোনো খবরও তারা নিশ্চিত হতে পারেননি বলে জানান তিনি।
করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনের মধ্যে গত ৭ এপ্রিল ভোরে ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে খুনি আব্দুল মাজেদকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। এর পাঁচদিন পরেই বিচারের রায় অনুযায়ী তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
মাজেদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর রিসালদার মোসলেমের ভারতে আটকের খবর দিয়েছিল আনন্দবাজার। বলা হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা থেকে তাকে আটক করা হয়।
এ খবরের ভিত্তিতে বাংলাদেশ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নড়েচড়ে ওঠেন। পুলিশ সদর দপ্তরে অবস্থিত ইন্টারপোল বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) এই খবরের সত্যতা যাচাইয়ে তৎপর হয়।
এনসিবির এআইজি মহিউল ইসলাম বুধবার বলেন, খবর প্রকাশের পরপরই ভারতের এনসিবিকে একটি চিঠি দিয়ে ঘটনা বিষয়ে জানতে চান তারা। প্রায় দুই মাসেও তাদের পক্ষ থেকে চিঠির কোনো জবাব আসেনি।
“আমরা এ ব্যাপারে ভারতের এনসিবির সাথে যোগাযোগ রাখছি,” বলেন তিনি।
খবর প্রকাশের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থার যে সব তৎপরতা দেখা গিয়েছিল, বর্তমানে তাতে ভাটাই দেখা যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “বঙ্গবন্ধুর এই খুনির গ্রেপ্তারের খবরটি অদৌ ঠিক নয়।”
এপ্রিলে রিসালদার মোসলেম গ্রেপ্তারের খবরের পরপরই দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার ফরিদ হোসেন বলেছিলেন, তিনি শুধু সংবাদপত্রেই খবরটি দেখেছেন, এর বাইরে কোনো তথ্য তার কাছে নেই।
প্রায় দুইমাস পর বুধবার একই কথা বলেন ফরিদ হোসেন।
তিনি বলেন, তাদের কাছে কোনো ‘আপডেট’ নেই। বঙ্গবন্ধুর এই খুনির বিষয়ে এখনও কেউ তাদের কিছু জানায়নি।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে মোসলেমসহ পাঁচজন বর্তমানে পলাতক আছে।
মোসলেম ছাড়া বাকি চারজন হচ্ছেন খন্দকার আবদুর রশিদ, এ এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম ও এসএইচএমবি নূর চৌধুরী।
এদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরীর কানাডায় রয়েছেন। রশিদ ও ডালিমের অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই এনসিবি বাংলাদেশ শাখার কাছে।
মাজেদকে নিয়ে ছয় আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। ১০ বছর আগে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর হয়। তারা হলেন সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন (আর্টিলারি)।