ম্যাচের প্রথম ইনিংস দেখেছে রেকর্ডের পর রেকর্ড। দ্বিতীয় ইনিংসেও তেমন কিছু হলে বিস্ময়ের কিছু ছিল না। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ছুড়ে দেওয়া ২৩২ রানের লক্ষ্য ছুঁতে পারলেই তো হতো। আইপিএলে তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটা হয়ে যেত রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর। রেকর্ডের পেছনে ছুটে অবশ্য একটুর জন্য লজ্জার হাত থেকে বেঁচে গেছে দলটি। জয় না পাক, অন্তত আইপিএলে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের রেকর্ড তো এড়াতে পেরেছেন কোহলিরা! ১১৮ রানের জয় পেয়েছে হায়দরাবাদ।
দিনটা শুরুই হয়েছে রেকর্ড দিয়ে। ১৬ বছর ১৫৭ দিনে আইপিএল অভিষেক হয়েছে প্রয়াস রায় বর্মণের। সে রেকর্ড একটু পরেই ভুলে যাওয়ার দশা। জনি বেয়ারস্টো ও ডেভিড ওয়ার্নার আগ্রাসী ব্যাটিং কী, সেটা বোঝালেন আজ। ওয়ার্নারকে পার্শ্ব চরিত্র বানিয়ে ঝড় তুললেন বেয়ারস্টো। ৫ ওভারেই পঞ্চাশ তুলল হায়দরাবাদ। বেয়ারস্টো ফিফটি ছুঁলেন ২৮ বলে। ওয়ার্নারও খুব একটা পিছিয়ে ছিলেন না, তাঁর ফিফটি ৩২ বলে। কিন্তু ওয়ার্নার ফিফটি ছুঁতে ছুঁতেই বেয়ারস্টো এগিয়ে গেছেন সেঞ্চুরির দিকে। ১৩তম ওভারে ওয়ার্নার যখন পঞ্চাশ পেরোলেন, বেয়ারস্টোর রান তখন ৮৪! ৫২ বলে ১২ চার ও ৫ ছক্কায় সেঞ্চুরি পেয়ে গেলেন বেয়ারস্টো। ১৭তম ওভারে যুজবেন্দ্র চাহালের বলে উমেশ যাদবের ডাইভিং ক্যাচের শিকার হয়ে ফেরার আগে আরও দুই ছক্কা মেরে ১১৪ রান (৫৬ বলে) করেছেন বেয়ারস্টো। এতেই আইপিএলে উদ্বোধনী জুটির রেকর্ড (১৮৫) হয়ে গেছে। এতে ভেঙে গেছে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ক্রিস লিন ও গৌতম গম্ভীরের ১৮৪ রানের জুটির রেকর্ড।
টি-টোয়েন্টি খেলা বলেই চার-ছক্কার কারণে এগিয়ে থাকলেন বেয়ারস্টো। কিন্তু সত্যিকারের একটি লড়াকু ইনিংস ছিল ওয়ার্নারের।। ৪২ ডিগ্রি উত্তাপে ৫৪ বলে ১০০ করেছেন ওয়ার্নার। তাতে মাত্র ৫ টি করে চার ও ছয়! অর্থাৎ বাকি পঞ্চাশ রান এসেছে দৌড়ে। এই গরমেও মাত্র ১৩টি ডট বল। চার-ছক্কার ক্রিকেটে বাউন্ডারিতে নজর কম দিয়েও কীভাবে দ্রুত রান তোলা যায় তার সেরা উদাহরণ ছিল এটি। শেষ ওভারে সেঞ্চুরির পর তাই উদ্যাপনটাও হলো বুনো। আইপিএলে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো এক ইনিংসে দুজন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি পেলেন। উদ্বোধনী জুটির দুজন হিসেবে আনলে টি-টোয়েন্টির ইতিহাসেই মাত্র দ্বিতীয়বার। এমন রান উৎসবের মাঝে মঈন আলী যে ১৫তম ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়েছেন, এ তথ্যটাও কেন যেন অবিশ্বাস্য ঠেকে।
এ রান তাড়া করার স্বপ্ন দেখতেও পারত বেঙ্গালুরু। আইপিএলের ইতিহাসে প্রথম এক ইনিংসে দুজন ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি করা দুই ব্যাটসম্যান যে তাদের দলেই। ২০১৬ সালের সে দিনটাকে ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখছিল বেঙ্গালুরু। কিন্তু বিরাট কোহলি আর এবি ডি ভিলিয়ার্স তেমন কিছু দেখাতে পারলেন কই? একজন ১০ বলে ৩ রান করেছেন। অন্যজন মোহাম্মদ নবীর বলের লাইন মিস করে দ্বিতীয় বলেই বোল্ড হওয়ার আগে করেছেন ১ রান। মোহাম্মদ নবীর ১১ রানে ৪ উইকেটের স্পেলে ৩৫ রানেই ছয় উইকেট হারিয়ে বসেছিল দলটি। আইপিএলে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের রেকর্ড তখন অবশ্যম্ভাবী বলে ঠেকছিল।
কলিন গ্র্যান্ডহোম ও বর্মণের ৫১ রানের জুটি সেটা ঠেকিয়েছে। গ্র্যান্ডহোম (৩৭) বেঙ্গালুরুর বড় ব্যবধানে হারের দলীয় রেকর্ডটাও (১৪০ রানে হার) পার করেছেন। কিন্তু ইনিংসের দ্বিতীয় শেষ বলে অলআউট হওয়া ঠেকানো যায়নি, পরাজয়ের ব্যবধানও এক শর নিচে নামেনি।