চলতি অর্থবছরের সাড়ে তিন মাসে ৭৯৪ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ে আসা রেমিটেন্সের প্রায় অর্ধেক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম ১৫ দিনে ১২২ কোটি ৭৮ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
২০১৯ সালের অক্টোবরে ১৫ দিনে ৮০ কোটি ডলার পাঠিয়েছিলেন তারা। আর পুরো অক্টোবর মাসে এসেছিল ১৬৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার।
সব মিলিয়ে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের সাড়ে তিন মাসে (১ জুলাই থেকে ১৫ অক্টোবর) ৭৯৪ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছে।
এই অর্থ গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের পুরো সময়ের ৪৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। গত অর্থবছরে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা।
আর এক যুগ আগে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৭৯০ কোটি ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছিল; এবার সাড়ে তিন মাসেই সেই অংক ছাড়িয়ে গেছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, “দিন যত যাচ্ছে, প্রবাসী ভাই-বোনেরা বেশি বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠাচ্ছেন। জুলাইয়ের পর সেপ্টেম্বরেও ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছিল। ১৫ দিনের যে তথ্য আমরা পেয়েছি, তাতে নিশ্চিত করে বলা যায়, অক্টোবরেও ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আসবে।”
রেমিটেন্সের এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “বৈধ পথে রেমিটেন্স আনতে আমরা গত অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছি। এছাড়া রেমিটেন্স পাঠাতে যে ফরম পূরণ করতে হয়, তা সহজ করা হয়েছে। এখন আর কেউ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠায় না। সবই বৈধ পথে আসে।”
চলতি অর্থবছর শেষে রেমিটেন্সের পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে আশা প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “মূলত রেমিটেন্সের উপর ভর করেই আমাদের রিজার্ভে একটার পর একটা রেকর্ড হচ্ছে। এইতো কয়েক দিন আগে রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই তা ৪২ বিলিয়ন ডলারে যাবে। আর ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারও ছাড়াবে বলে আমি প্রত্যাশা করছি।”
গত সেপ্টেম্বর মাসে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।
এর আগে এই মহামারীর মধ্যেই গত জুলাই মাসে ২৬০ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।
করোনাভাইরাস মহামারীর আঁচ বিশ্বের অর্থনীতিতে লাগার পর গত এপ্রিল মাসে রেমিটেন্স কমেছিল। এরপর থেকে রেমিটেন্স বাড়ছে।
ধারণা করা হচ্ছিল, প্রবাসী বাংলাদেশিরা কষ্টের মধ্যেও ঈদের সময় স্বজনদের কাছে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন, আর অনেকে কাজ হারিয়ে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করছেন বলে জমানো অর্থ আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন বলে রেমিটেন্স বাড়ছে।
কিন্তু অগাস্টের শুরুতে কোরবানির ঈদের পরও রেমিটেন্সের গতি থামেনি। পুরো মাসে ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক মঞ্জুর হোসেন বলেন, “অনেকে বলছেন, যার যা সঞ্চয় ছিল, এই মহামারীর সময়ে স্বজনদের প্রয়োজনে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু সেটা এক মাস-দুই মাস হতে পারে। এপ্রিলের পর থেকেই রেমিটেন্স ঊর্ধ্বমুখী। মাস যত যাচ্ছে, সেটা বেড়েই চলেছে।”
দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা ১ কোটিরও বেশি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। দেশের জিডিপিতে এই রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।
এই রেমিটেন্সে ভর করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ গত ৮ অক্টোবর প্রথমবারের মত ৪০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। সোমবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।