মাহমুদউল্লাহর শটে বল ছুটল বাউন্ডারিতে। ধরা দিল জয়। আরেক প্রান্তে মোসাদ্দেক হোসেন উঁচিয়ে ধরলেন দুহাত। ড্রেসিং রুমের সামনে বাংলাদেশের ক্রিকেটারা মেতে উঠলেন উল্লাসে। গ্যালারিতে শখানেক বাংলাদেশী দর্শকের গগণবিদারী আনন্দ চিৎকার। উৎসবের আবহে মিলিয়ে গেল অতীতের বেদনাগুলো। অবসান হলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের দীর্ঘ যন্ত্রণাময় অপেক্ষার। অবশেষে ধরা দিল আন্তর্জাতিক ট্রফি !
প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে শিরোপার স্বাদ পেল বাংলাদেশ। রোমাঞ্চকর রান তাড়ায় ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে ৫ উইকেটে।
বাংলাদেশের জয়ের নায়ক যিনি, সাকিব আল হাসান ফিট থাকলে তার সুযোগই হতো না একাদশে। অভাবনীয় ব্যাটিং ঝড়ে রেকর্ড গড়া অপরাজিত ফিফটিতে দলকে জিতিয়েছেন সেই মোসাদ্দেক হোসেন। কঠিন রান তাড়ায় বাংলাদেশের উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়ে জয়ের আরেক নায়ক সৌম্য সরকার।
ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হতে হলে বাংলাদেশ লক্ষ্য পায় ২৪ ওভারে ২১০ রান। ডাবলিনে শুক্রবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০.১ ওভারে বিনা উইকেটে ১৩১ রান করার পর নেমেছিল বৃষ্টি। পরে ম্যাচ নেমে আসে ২৪ ওভারে। রান তুলেছে তারা ১ উইকেটে ১৫২। ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে নির্ধারিত হয়েছে বাংলাদেশের লক্ষ্য।
৬৪ বলে ৭৪ রান করেছেন গোটা টুর্নামেন্টে দারুণ ব্যাটিং করা হোপ। ৭৮ বলে ৬৯ রানে অপরাজিত ছিলেন আমব্রিস।
টানা তিন টস হারার পর এ দিন মুদ্রা নিক্ষেপে হাসতে পারেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। মেঘলা আকাশের নীচে, বৃষ্টির শঙ্কায় থাকা ম্যাচে বাংলাদেশ নামে বোলিংয়ে।
শুরুটা ছিল বেশ আঁটসাঁট। প্রথম ৫ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলতে পেরেছিল ১৫ রান, বাউন্ডারি ছিল একটি। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষা ছিল দারুণ। সাইফ উদ্দিনের করা ষষ্ঠ ওভারে আমব্রিসের তিন বাউন্ডারিতে চিত্র বদলানোর শুরু। সাইফকেই পরে চোখধাঁধানো ফ্লিকে ছক্কায় ওড়ান হোপ।
দুই দলের আগের লড়াইয়ের ম্যাচ সেরা মুস্তাফিজুর রহমানকে একাদশ ওভারে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক। আমব্রিস স্বাগত জানান আবারও ওভারে তিন বাউন্ডারিতে।
ক্রমে বাড়তে থাকে ক্যারিবিয়ানদের রানের গতি। ম্রিয়মান হতে থাকে বাংলাদেশের শরীরী ভাষা। ৫০ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন হোপ, ৬০ বলে আমব্রিস।
বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডারদের যখন মনে হচ্ছিল অসহায়, ক্যারিবিয়ানদের থামায় বৃষ্টি। এরপর থেকেই অপেক্ষা। কখনও থামে, কখনও নামে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান বিকেলে।
আবার খেলা শুরুর পর ঝুঁকির পথে যায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শুরুটা দারুণ হওয়ায় বাংলাদেশের লক্ষ্য এমনিতেই ছিল বড় হওয়ার পথে। হোপ তবু মিরাজকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েছেন সীমানায়। বাকি ৩.৫ ওভারে ২১ রান যোগ করে তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৪ ওভারে ১৫২/১ (হোপ ৭৪, আমব্রিস ৬৯*, ব্রাভো ৩*; মাশরাফি ০/২৮, সাইফ ০/২৯, মুস্তাফিজ ০/৫০, মোসাদ্দেক ০/৯, মিরাজ ১/২২, সাব্বির ০/১২)
বাংলাদেশ: (লক্ষ্য ২৪ ওভারে ২১০) ২২.৫ ওভারে ২১৩/৫ (তামিম ১৮, সৌম্য ৬৬, সাব্বির ০, মুশফিক ৩৬, মিঠুন ১৭, মাহমুদউল্লাহ ১৯*, মোসাদ্দেক ৫২*; নার্স ০/৩৫, হোল্ডার ০/৩১, রোচ ০/৫৭, গ্যাব্রিয়েল ২/৩০, রিফার ২/২৩, অ্যালেন ১/৩৭)
ফল: ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ ঃ মোসাদ্দেক হোসেন