রান উৎসবের ম্যাচে দাপট দেখালেন ব্যাটসম্যানরা। তবে নিজের শেষ দুই ওভারে দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি পেসারের নৈপুণ্যে রোমাঞ্চকর ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসকে হারাল রাজশাহী কিংস।
বিপিএলে শনিবারের দ্বিতীয় ম্যাচে ৭ রানে জিতেছে রাজশাহী। ১৯৮ রান তাড়ায় ৮ উইকেটে ১৯১ রান করে চিটাগং।
জয়ের জন্য শেষ ৩ ওভারে ২৭ রান প্রয়োজন ছিল চিটাগংয়ের, হাতে ছিল ৫ উইকেট। অষ্টদশ ওভারে বোলিংয়ে ফিরে আঁটসাঁট বোলিংয়ে ৬ রান দেন মুস্তাফিজ। ১৯তম ওভারে কামরুল ইসলাম রাব্বি দেন ৮ রান। শেষ ওভারে ৫ রান দিয়ে মুস্তাফিজ তুলে নেন ২ উইকেট। নখকামড়ানো উত্তেজনার ম্যাচে দারুণ জয় তুলে নেয় রাজশাহী।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দলকে ভালো শুরু এনে দেন সৌম্য সরকার ও জনসন চার্লস। শুরুতে দুইবার ক্যাচ হতে হতেও বেঁচে যাওয়া সৌম্য চতুর্থ ওভারে নাঈম হাসানকে হাঁকান তিনটি চার।
তবে এই মোমেন্টাম ধরে রাখতে পারেননি সৌম্য। খালেদ আহমেদকে ওড়ানোর চেষ্টায় ফিরে যান মুশফিকুর রহিমকে সহজ ক্যাচ দিয়ে। পাঁচ চারে রাজশাহীর বাঁহাতি ওপেনার ফিরে যান ২৬ রান করে।
ছন্দে থাকা লরি ইভান্স চার্লসের সঙ্গে গড়েন ৭০ রানের জুটি। খালেদের স্টাম্পের বেশ বাইরের বল তাড়ায় চেষ্টায় ইভান্স মোহাম্মদ শাহজাদের গ্লাভসবন্দি হলে ভাঙে জুটি। চারটি চারে ২৯ বলে ৩৬ রান করে বিদায় নেন ইভান্স।
পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর আবু জায়েদ চৌধুরীর বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান চার্লস। ক্যারিবিয়ান এই ওপেনার ৪৩ বলে পাঁচ চার ও দুই ছক্কায় করেন ৫৫ রান।
নেমেই বোলারদের ওপর চড়াও হন ডেসকাট। তরুণ অফ স্পিনার নাঈমকে হাঁকান টানা তিন ছক্কা। রান আউট হয়ে থামেন চার ছক্কায় ১১ বলে ২৭ রান করে।
রবিউল হকের বলে ব্যক্তিগত ৩ রানে সিকান্দার রাজার হাতে জীবন পাওয়া ক্রিস্টিয়ান ইয়ঙ্কার দলকে নিয়ে দুইশ রানের কাছে। শেষ ওভারে রবিউলকে পরপর দুটি ছক্কা হাঁকানোর পর আবার লং অফে আবার রাজার হাতে জীবন পান তিনি।
দুটি বিমার হয়ে যাওয়ায় সেই ওভারের মাঝপথে সরে যেতে হয় রবিউলকে। তার ওভারটি শেষ করা ক্যামেরন ডেলপোর্ট শেষ বলে তুলে নেন ইয়ঙ্কারের উইকেট। লং অফে মুশফিকের হাতে ধরা পড়া দক্ষিণ আফ্রিকান ডানহাতি ব্যাটসম্যান ১৭ বলে তিন ছক্কা ও এক চারে করেন ৩৭ রান।
বড় রান তাড়ায় দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন শাহজাদ। রাব্বির করা প্রথম ওভারে তিন ছক্কা ও এক চারে তুলে নেন ২২ রান। তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে শুরুর জুটি ভাঙেন মুস্তাফিজ। কট বিহাইন্ড করে বিদায় করেন ক্যামেরন ডেলপোর্টকে।
অষ্টম ওভারে বোলিংয়ে এসে বিপজ্জনক শাহজাদকে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। অফ স্পিনারের ফুল লেংথ বল ওড়ানোর চেষ্টায় সৌম্যর হাতে ধরা পড়েন ২২ বলে পাঁচ ছক্কা ও তিন চারে ৪৯ রান করা শাহজাদ।
কিপার ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর বোলারদের ওপর চড়াও হন ইয়াসির আলী চৌধুরী। সৌম্যকে ছক্কা-চার হাঁকানোর পর ছক্কায় উড়ান আরফাত সানিকে। সৌম্যকে পরপর দুই চার হাঁকিয়ে ইয়াসির ৩১ বলে তুলে নেন টানা দ্বিতীয় ফিফটি।
বাঁহাতি স্পিনার সানি বোল্ড করে থামান ছন্দে থাকা ইয়াসিরকে। তরুণ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের ৩৮ বলে খেলা ৫৮ রানের ইনিংসটি গড়া দুটি ছক্কা ও সাতটি চারে।
রাব্বিকে স্লগ করে ছক্কা হাঁকানোর পর স্কুপ করতে গিয়ে মুমিনুল হকের ধরা পড়েন মুশফিকুর রহিম। ইয়াসির ও অধিনায়কের বিদায়ের পর মোসাদ্দেক হোসেন দ্রুত ফেরায় চাপে পড়ে যায় চিটাগং।
ফিল্ডিংয়ে অসংখ্য ভুল করা রাজা টিকিয়ে রাখেন দলের জয়ের আশা। মুস্তাফিজের করা শেষ ওভারে জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। ১৫ বলে দুটি করে ছক্কা-চারে ২৯ রান করা রাজাকে ওভারের প্রথম বলে বোল্ড করেন রাজশাহীর বাঁহাতি পেসার।
সেই ওভারে ৫ রান দিয়ে দলকে দারুণ জয় এনে দেন মুস্তাফিজ। ১০ ম্যাচে পঞ্চম জয় পায় রাজশাহী। নয় ম্যাচে তৃতীয় হারের স্বাদ পায় চিটাগং।
২৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রাখা মুস্তাফিজ জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রাজশাহী কিংস: ২০ ওভারে ১৯৮/৫ (চার্লস ৫৫, সৌম্য ২৬, ইভান্স ৩৬, ডেসকাট ২৭, ইয়ঙ্কার ৩৭, মাহমুদ ১*; আবু জায়েদ ৪-০-২৪-১, খালেদ ৪-০-৩২-২, নাঈম ৪-০-৪৪-০, রবিউল ৩.৩-০-৪৭-০, ডেলপোর্ট ৩.৩-০-৩৫-১, রাজা ১-০-১০-০)
চিটাগং ভাইকিংস: ২০ ওভারে ১৯১/৮ (শাহজাদ ৪৯, ডেলপোর্ট ৭, ইয়াসির ৫৮, মুশফিক ২২, মোসাদ্দেক ১, রাজা ২৯, জাদরান ১১, নাঈম ০*, রবিউল ৩, আবু জায়েদ ১*; রাব্বি ৪-০-৪৪-২, মিরাজ ৪-০-২৫-২, মুস্তাফিজ ৪-০-২৮-৩, সানি ৪-০-৩৭-১, ডেসকাট ২-০-৩২-০, সৌম্য ২-০-২৩-০)
ফল: রাজশাহী কিংস ৭ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মুস্তাফিজুর রহমান