রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে উৎসাহিত করার জন্য মিয়ানমারকে আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
পরিষদের চলতি অধিবেশনে ‘মিয়নমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক এই প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার কথা সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে জেনিভায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুসারে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে নিজেদের আবাসস্থলে ফেরত যেতে উৎসাহিত করতে মিয়ানমারকে আহ্বান জানানো হয়েছে।”
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় প্রশংসা করার পাশাপাশি তাদের প্রত্যাবাসন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বানও জানানো হয়েছে ওই প্রস্তাবে।
২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট থেকে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা; এই সংখ্যা কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখ ছাড়ায়। আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
তাদের কক্সবাজারের কয়েকটি কেন্দ্রে আশ্রয় দিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা নিয়ে জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।
এমন প্রেক্ষাপটে সোমবার মানবাধিকার পরিষদের ৪৭ সদস্য দেশের ৩৭টির ভোটে প্রস্তাবটি গৃহীত। উন্মুক্ত ভোটে দুটি দেশ বিপক্ষে মত দেয় এবং ভোটদানে বিরত থাকে আট দেশ।
প্রস্তাবে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার আওতায় তদন্ত অব্যাহত ও জোরদার করার প্রতি গুরুত্বারোপ করার কথা তুলে ধরা হয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে চলমান প্রক্রিয়া ও গাম্বিয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে চলমান কার্যক্রমকে স্বাগত জানানো হয়।”
অধিবেশনে জেনিভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি শামীম আহসান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক বিবেচনায় নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় প্রদান করেন।
“তবে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে সসম্মানে ও স্বেচ্ছায় নিজ জন্মভূমিতে তাদের ফিরে যাওয়ার মাধ্যমেই এই আন্তর্জাতিক সমস্যার স্থায়ী ও গ্রহণযোগ্য সমাধান সম্ভব।”
প্রস্তাবের উপর আলোচনায় রাষ্ট্রদূত বলেন, “অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পক্ষে জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এটি একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।”
রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধন ও গণহত্যার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ, তাদের নাগরিকত্ব প্রদান ও মিয়ানমারে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এবারের প্রস্তাবে জাতিসংঘের ‘স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়া’, মহাসচিবের বিশেষ দূত এবং মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার স্পেশাল র্যাপর্টোরসহ সংশ্লিষ্টদের রাখাইন ও মিয়ানমারের অন্যান্য অঞ্চলে নির্বিঘ্নে প্রবেশের অনুমতিসহ সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য মিয়ানমারকে আহ্বান জানানো হয়।
স্পেশাল র্যাপর্টোরের কার্যকাল এক বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্তও এ প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মিশন।
অধিবেশনে দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য স্পেশাল র্যাপর্টোরকে অনুরোধ করা হয়।