প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি রোহিঙ্গা ইস্যুতে কারো সঙ্গে লড়াইয়ে জড়াতে চাই না। আমি এই পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ একটি সমাধান চাই। কারণ তারা (মিয়ানমার) আমার নিকটতম প্রতিবেশী। শুক্রবার ম্যানহাটনের মিডটাউন হোটেলে ওয়াশিংটন পোস্টের সাপ্তাহিক সাময়িকী ‘টুডেস ওয়ার্ল্ডভিউ’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। ‘রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের বোঝা হয়ে থাকতে পারে না: শেখ হাসিনা’ শিরোনামে সোমবার ‘টুডেস ওয়ার্ল্ডভিউ’য়ে সাক্ষাৎকারটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। খবর ওয়াসিংটন পোস্ট ও বাসসের।
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি মনে করে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় কাজ হবে, তাহলে তো খুবই চমৎকার।
এই ইস্যুটি নিয়ে তিনি মিয়ানমারের বেসামরিক নেতা নোবেল বিজয়ী অং সান সুচির সঙ্গেও আলোচনা করেছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (সুচি) এই পরিস্থিতির জন্য দেশটির সামরিক বাহিনীকে দায়ী করেছেন। সুচি আমাকে বলেছেন, সেনাবাহিনী তার কথা খুব একটা শোনে না। কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি যে, তিনি (সুচি) তার অবস্থান থেকে সরে এসেছেন।
ভারতে ২০১৬ সালে আয়োজিত আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলনকালে তাদের মধ্যে ওই বৈঠকটি হয়। এরপর থেকে সুচি দেশটির সামরিক বাহিনীর সিদ্ধান্তকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি তিনি জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠিটিকে বুঝাতে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটিও উচ্চারণ করেন না।
সাম্প্রতিক একটি নিবন্ধের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউএন কমিশনের একটি নিবন্ধ সতর্ক করে দিয়েছে, ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে যে ধরনের সহিংতার কারণে রোহিঙ্গারা দেশত্যাগে বাধ্য হয় এখনো সেখানে একই অবস্থা বিরাজ করছে। মিয়ানমার সরকারের একটি অংশের ওই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার জোরালো প্রমাণ মিলেছে। সেখানে আবারো গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। মিয়ানমার সরকার গণহত্যা ঠেকাতে, গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করতে ও গণহত্যার অপরাধীদের শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি এ মাসের গোড়ার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, সহিংসতা দমনে মিয়ানমার কিছুই করেনি। রাখাইনে এখনো যেসব রোহিঙ্গারা আছেন, তারা ২০১৭ সালের আগস্টে সহিংসতার সময়কার মতোই ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন।
নিবন্ধটিতে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের ছোট একটি দলের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে দেশটির সঙ্গে চুক্তি হলেও শরণার্থীদের অধিকাংশ রাখাইনে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সংঘটিত সহিংসতার বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটা একটা বড় বোঝা, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তাদের ওপর যা ঘটেছে তা এক ধরনের গণহত্য। হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ অনেক কিছু ঘটেছে। নিরাপত্তার জন্য তারা তাদের দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। আজকের দেশের এই বোঝা আঞ্চলিক সংকটে রূপ নিতে পারে। ক্রমবর্ধমান হতাশাগ্রস্ত ও কর্মহীন শরণার্থীরা মৌলবাদ ও উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকে যেতে পারে। দীর্ঘদিন অবস্থান করলে খুব সহজেই তারা ‘জঙ্গি গ্রুপগুলো’তে যোগ দিতে পারে। নিরাপত্তার কথা ভেবে সরকার গত সপ্তাহে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ এবং সেখানে টহলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের এখন থাকার জন্য স্বাগত জানানো হয়েছে। তারা আমাদের মাটিতে আছে। আমরা আর কী করতে পারি!
মিয়ানমারকে চাপে ফেলতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী কী করতে পারে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মিয়ানমারের সমস্যা হচ্ছে তারা অন্য কারো কথা শোনে না। আমার প্রত্যাশা- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর আরো চাপ প্রয়োগ করবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এনজিও ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার শরণার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করছে।