আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ কোনো ধরনের বিরোধে না জড়িয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে মিয়ানমারের সাথে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে (ডিএসসিএসসি) ২০২০-২০২১ কোর্সের গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে তিনি এ কথা জানান। খবর ইউএনবির
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বিপন্ন মানবতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। জোর করে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকরা যাতে তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে পারে সে জন্য আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের স্বার্থে আমরা সুযোগ সৃষ্টি করা ছাড়া কারও সাথে বিরোধে জড়ায়নি।’
শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমারের সাথে তার সরকার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে পারে। ‘আমরা সেই আলোচনাটি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়েই করছি, তবে আমাদের অবশ্যই বলতে হবে- তারা অনাচার করছে…তাদের অবশ্যই তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে হবে এবং আমরা এটি চাই।’
২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আবার আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। ২০১৯ সালে দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা।
করোনাভাইরাস সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই ভাইরাসটি পুরো বিশ্বকে স্থবির করে তুলেছে এবং আর্থ-সামাজিক বিকাশসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই মারাত্মক ধাক্কা দিয়েছে।
‘এই অবস্থায় আমরা দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা ছাড়াও অর্থনীতিসহ সকল উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বজায় রাখার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি’, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের টিকা আসার পরে বাংলাদেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ‘আমরা এই ভাইরাসকে মোকাবিলা করছি।’
দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রসঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর গুরুত্ব সীমাহীন- একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা উপলব্ধি করেই জাতির পিতা দেশে একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার জন্য স্বাধীনতার পরপরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং এ লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করেছিলেন।’
তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর নীতি অনুসরণ করে সরকার বাহিনীকে আরও বিকাশ, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের জন্য ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করেছে এবং এখন তা বাস্তবায়নে কাজ করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ জাতির পিতার বৈদেশিক নীতি- ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’-কে গুরুত্ব দেয় এবং তার সরকার আন্তঃদেশীয় সম্পর্ককে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত সক্রিয়।
এ সময় তিনি ডিজিটালাইজেশন, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য খাতসহ বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়নে তার সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজকে সর্বাধুনিক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিহিত করার পাশাপাশি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এখান থেকে সনদ নেয়া কর্মকর্তারা তাদের দক্ষতা, জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল, টেকসই এবং স্বনির্ভর দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন।
অনুষ্ঠানে ডিএসসিএসসি কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. যুবায়ের সালেহীন প্রমুখ বক্তব্য দেন।