রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে সরকার কূটনৈতিক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহ কমে গেলে ১১ লাখ অতিরিক্ত মানুষের বোঝা বাংলাদেশে কীভাবে বইবে? এ বিষয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
মঙ্গলবার বিআরটিএ ও বিআরটিসির কুমিল্লা জোনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল সভায় এ কথা বলেন মন্ত্রী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সরকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ তৈরিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট থেকে ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা; এই সংখ্যা কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখ ছাড়ায়। আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ‘উদারতার পরিচয়’ দিয়েছেন, তা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।
কিন্তু সঙ্কট দীর্ঘায়িত হওয়ায় বাংলাদেশের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, “এক দিকে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা হচ্ছে, পাশাপাশি ভাসানচরে পুনর্বাসনের প্রস্তুতিও চলছে।”
বিআরটিএ ও বিআরটিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই ভার্চুয়াল সভায় মন্ত্রী বলেন, শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহনের পুরনো ভাড়ায় ফিরে যাওয়ার বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।
“গণপরিবহনের বিষয়ে সম্প্রতি পরিবহন মালিক-শ্রমিক সহ স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে বিআরটিএ সভা করেছে। সে সভার সুপারিশ সরকারের বিবেচনার জন্য পেশ করা হয়েছে। জনস্বার্থে এবং বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহনের পুরনো ভাড়ায় ফিরে যাওয়ার বিষয়টি সরকার চিন্তাভাবনা করছে।”
কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে ৬৬ দিনের লকডাউন শেষে গত ১ জুনে থেকে শর্তসাপেক্ষে বাস চলাচল শুরু হয়।
গত ৩১ মে মহামারীর মধ্যে কম যাত্রী তুলতে হবে বলে মালিকদের ক্ষতি পোষাতে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লা এবং নগর পরিবহনের বাস ও মিনিবাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানায় সরকার।
প্রায় তিন মাস ওই ব্যবস্থা চলার পর গত ২০ অগাস্ট বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে এক বৈঠকে পুরনো হারের ভাড়ায় ফিরে গিয়ে আসন পূর্ণ করে বাস চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “মালিক-শ্রমিকদের সাথে আলোচনার পর আমি এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং কেবিনেট সচিবের সাথে কথা বলেছি। শিগগিরই এ বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।”
সেক্ষেত্রে পরিবহনে মাস্ক পরার নিয়ম শতভাগ মেনে চলতে হবে। দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া যাবে না বলে জানান তিনি।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ এখন ‘একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে’ রয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “প্রতিদিনের সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা একটি ট্রেন্ড ধরে চলছে। বাড়ছেও না, আবার কমছেও না।
“বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে তুলনা করলে বাংলাদেশের অবস্থান তুলনামূলকভাবে ভালো হলেও আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। এরই মাঝে রাজধানী ঢাকায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় বাইরে বের হলে মনে হয় দেশ করোনাই নেই।”
কাদের বলেন, বাইরে বের হলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হলেও অধিকাংশ মানুষ তা মানছে না।
“এ ধরনের অবহেলা ভয়ঙ্কর ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অনেক দেশে ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ওয়েভ শুরু হয়েছে। তাই আমাদের স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনসহ বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করে বাইরে বেরোতে হবে। (মহামারী) খুব শিগগিরই চলে যাবে এমন না ভেবে ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে হবে।”