লকডাউনের কারণে বড় মন্দা দেখছে আইএমএফ

Untitled-3-samakal-5e95d95946f42

শেষবার বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ মন্দা দেখা দিয়েছিল ২০০৮-০৯ অর্থবর্ষে। করোনার জেরে এক দশকের সর্ববৃহৎ আর্থিক মন্দার দিকে হাঁটছে বিশ্ব। এমনটাই মনে করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) । আইএমএফের মতে, এখনই করোনার প্রকোপ কমানো না গেলে আগামী বছর বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।

আইএমএফের মতে, অর্থনীতির এই থেমে থাকাটা বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক। করোনার প্রভাবে সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দা ২০০৮-০৯ অর্থবর্ষের থেকেও খারাপ হতে পারে। ইতিমধ্যে প্রায় ৮০ টিরও বেশি দেশ তাদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য চেয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই স্বল্প আয়ের দেশ।

করোনভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর অর্থনীতি হিমশীতল হয়ে পড়ার পর মঙ্গলবার এক রিপোর্ট প্রকাশ করে আইএমএফ। রিপোর্টে অনুমান করা হয়, বিশ্বব্যাপী মোট দেশীয় পণ্য এই বছর ৩ শতাংশ সংকুচিত হবে। এটি জানুয়ারির ৩.৩% মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণের সাথে তুলনা করে বলা হয়েছে। ২০২০ সালে উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে ২.১ শতাংশে নেমে আসতে পারে, এমনকি তা ঋণাত্মক (মাইনাস) ০.৫ শতাংশও হতে পারে। অথচ ২০১৯ সালে এ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৮ শতাংশ। চলতি বছর এবং তার পরের বিশ্বব্যাপী জিডিপিতে একত্রে ক্ষতি প্রায় ৯ ট্রিলিয়ন ডলার হতে পারে। এখনই এই ভাইরাসের বিস্তার কমানো গেলে এবং বিশ্বজুড়ে লকডাউন উঠে গেলে ২০২১ সালের মধ্যে আর্থিক মন্দা কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। তবে এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে বিরাট অঙ্কের তহবিল প্রয়োজন। প্রায় ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।

আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা সতর্ক করে বলেছেন, করোনভাইরাস মহামারির কারণে চলতি বছর বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ‘তীব্র নেতিবাচক’ হবে। ১৯৩০ সালের মহামন্দার পর বিশ্ব সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ আংশিক পুনরুদ্ধার হবে বলে পূর্বাভাস দেন তিনি।

করোনাভাইরাস মহামারির প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় দেশে দেশে জারি হয়েছে লকডাউন। এতে অনেক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। অনেকে ছাঁটাই করছেন কর্মীদের। জর্জিয়েভা বলেন, উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে, শত শত বিলিয়ন ডলার বিদেশি সহায়তার প্রয়োজন হবে। মাত্র তিন মাস আগে ২০২০ সালে আমাদের সদস্য ১৬০টি দেশের মাথাপিছু আয়ে প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করেছিলাম। আজ এই পরিসংখ্যান একদম ঘুরে গেছে। আমরা আশঙ্কা করছি ১৭০টি দেশে মাথাপিছু আয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হবে। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে মহামন্দার পর সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কা করছি আমরা।

জর্জিয়েভা বলেন, যদি এই বছরের মাঝামাঝি এসে এই মহামারির প্রকোপ কমে তাহলে আগামী বছর আংশিক পুনরুদ্ধার হতে পারে বলে আশা করা যায়। তবে তিনি সতর্ক করেছেন পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তিনি বলেন, আমি জোর দিয়ে বলছি কি হবে তা নিয়ে প্রচণ্ড অনিশ্চয়তা আছে। কত দিন এই মহামারি থাকবেসহ বেশ কিছুর ওপর নির্ভর করে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হতে পারে।

বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বসন্তকালীন বৈঠক শুরুর আগের দিন আইএমএফ রিপোর্টটা প্রকাশ করল। করোনার কারণে এবারের বৈঠক ভার্চুয়াল হচ্ছে ।

বিশ্ব অর্থনীতিতে এ বছর কোনো প্রবৃদ্ধি হবে না, সংকোচন হবে ৩ শতাংশ । সেই তুলনায় বাংলাদেশে কিছুটা হলেও প্রবৃদ্ধি হবে মনে করছে আইএমএফ ।

প্রসঙ্গত,  অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন,  প্রবৃদ্ধি কম হবে, তবে অন্তত  ৬ শতাংশ হবে । কেননা করোনা আঘাত হেনেছে অর্থবছর ৮ মাস পার হওয়ার পর।

Pin It