লক্ষ্য ডিজিটাল বৈষম্যহীন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা

Tale-jogajog-5ca3b87e6940c

উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার এবং ডিজিটাল বৈষম্যবিহীন টেলিযোগাযোগ সেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রণীত জাতীয় টেলিযোগাযোগ নীতিমালার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।

পাশাপাশি গতকাল মঙ্গলবার ইন্টারন্যাশনাল লং ডিসট্যান্স টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিস (আইএলডিটিএস) নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। চূড়ান্ত নীতিমালায় আন্তঃসংযোগ স্থাপনের জন্য আইসিএক্স স্তরটি তুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সংস্থার চেয়ারম্যান জহুরুল হক সমকালকে জানিয়েছেন, গতকাল মঙ্গলবার সকালে বিটিআরসিতে এ-সংক্রান্ত বৈঠকের পর নীতিমালাটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সমকালকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বিটিআরসি থেকে আসা নীতিমালার বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া হবে। এর পর এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হবে।

দেশের প্রথম টেলিযোগাযোগ নীতিমালা প্রণীত হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাতকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে তখন এ নীতিমালা করা হয়। কিন্তু গত প্রায় ২০ বছরে দেশ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সেবার পরিধি অনেক বেড়েছে। নতুন অনেক লাইসেন্সও দেওয়া হয়েছে। তবে টেলিযোগাযোগ নীতিমালা হালনাগাদ না হওয়ায় নতুন নতুন সেবার অনুমতির অনেক ক্ষেত্রেই বিতর্ক ওঠে। এ বিতর্ক দূর করতে ২০১২ সালে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে টেলিযোগাযোগ নীতিমালা হালনাগাদ করার এবং ২০০১ সালের টেলিযোগাযোগ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৬ সালের জুন মাসে হালনাগাদ করা জাতীয় টেলিযোগাযোগ নীতির খসড়া অনুমোদন করা হয়। ২০১৮ সালে এটি চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। কিছু আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর সম্প্রতি এর গেজেট প্রকাশ করা হয়।

অন্যদিকে, আইএলডিটিএস নীতিমালা প্রথম প্রণীত হয় ২০১০ সালে। এর পর এই নীতিমালায় ভিওআইপি প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আন্তঃসংযোগ স্থাপনে আইসিএক্সসহ কয়েকটি স্তর নির্ধারণ করা হয়। শুরু থেকেই আইসিএক্স স্তর নিয়ে বিতর্ক ছিল।

পাঁচটি মূলনীতি :জাতীয় টেলিযোগাযোগ নীতিমালায় থাকছে পাঁচটি মূলনীতি। এগুলো হচ্ছে- উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার, সার্বজনীন অভিগম্যতা, কার্যকর শাসন ব্যবস্থাপনা, সুসংগত নিয়ন্ত্রণ এবং প্রসারিত দৃষ্টিভঙ্গি।

বাজারের ব্যাপারে বলা হয়েছে, টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো স্থাপন এবং সেবা প্রদান কার্যক্রম উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক বাজারের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। পাশাপাশি সমন্বিত সামাজিক কল্যাণ সর্বাধিক পর্যায়ে রাখতে সরকার বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।

অভিগম্যতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, আধুনিক টেলিযোগাযোগ সেবা সব নাগরিক এবং গোষ্ঠীর জন্য অভিগম্য বা সুগম্য হবে। সার্বজনীন অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে এর সব উপাদান, যেমন প্রাপ্যতা, ক্রয়ক্ষমতা এবং ব্যবহারের সক্ষমতাকে অবশ্যই বিবেচনায় আনা হবে। তবে শুধু এ তিনটি ক্ষেত্রেই তা সীমাবদ্ধ থাকবে না।

ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে বলা হয়েছে, সরকার টেলিযোগাযোগ খাতে উচ্চমানের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিসংক্রান্ত নীতিনির্ধারণ ও সমন্বয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রণমূলক কার্যক্রম অবশ্যম্ভাবী, স্বচ্ছ এবং বৈষম্যহীন হবে।

দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে বলা হয়েছে, একটি ডিজিটাল জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি বিনির্মাণের লক্ষ্যে টেলিযোগাযোগভিত্তিক শিল্পকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সুবিধাজনক স্থানে উন্নীত করতে ও অর্জিত সাফল্য ধরে রাখতে সমসাময়িক এবং সফল নতুন প্রযুক্তি, ধারণা ইত্যাদির প্রয়োগ ত্বরান্বিত করা হবে।

নীতিমালার উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন দিক :নীতিমালাটির ব্যাপ্তিকাল ধরা হয়েছে ১০ বছর। এ সময়ের মধ্যে কয়েকটি ক্ষেত্রে অর্জনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যেমন- ২০২০ সালের মধ্যে টেলিঘনত্ব ৯৫ শতাংশে ও ইন্টারনেটের বিস্তার ৬০ শতাংশে উন্নীত করা; সব জেলা, উপজেলা সদর এবং ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ বিস্তৃত করা; সব উপজেলা সদরে তারবিহীন উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড সেবা নিশ্চিত করা এবং দেশব্যাপী শতভাগ ডিজিটাল সম্প্রচার চালু করা।

২০২৩ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রায় বলা হয়েছে, শতভাগ টেলিঘনত্ব অর্জন, ইন্টারনেটের বিস্তার শতভাগে এবং ব্রডব্যান্ডের বিস্তার ৭০ শতাংশে উন্নীত করা, ৭০ শতাংশ গ্রামে ব্রডব্যান্ড সংযোগ স্থাপন এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে তারবিহীন ব্রডব্যান্ড সেবা নিশ্চিত করা।

২০২৭ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রায় বলা হয়েছে, জনসংখ্যার শতভাগই ব্রডব্যান্ড সেবা পাবে এবং দেশের ১০০ ভাগ গ্রামে ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হবে।

টেলিযোগাযোগ খাতসংশ্নিষ্ট বিভিন্ন আইন ও আইনের মর্যাদাসম্পন্ন দলিলগুলো নতুন এ নীতিমালার আলোকে সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে হালনাগাদ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

২০০১ সালের টেলিযোগাযোগ আইন পর্যালোচনা : নীতিমালায় বলা হয়, নতুন টেলিযোগাযোগ নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ পর্যালোচনা করা হবে। এ প্রসঙ্গে বিটিআরসির চেয়ারম্যান জহুরুল হক জানান, ২০০১ সালের আইন হালনাগাদ করার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। টেলিযোগাযোগ খাতে সেবা দেওয়ার সঙ্গে সংশ্নিষ্ট সব পক্ষ এবং এ খাতের বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের মতামতের ভিত্তিতে আইনটি হালনাগাদ করা হবে।

Pin It