লাগেজ নিয়ে হয়রানি করলে জেল-জরিমানা

1538467961

দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোয় বিদেশফেরত যাত্রীদের লাগেজ পেতে বিড়ম্বনা ও লাগেজ কেটে মালামাল চুরির অভিযোগ প্রায় নিয়মিত ঘটনা। বছরের পর বছর ধরে এমনটি চলে আসছে। এ নিয়ে বিমান কর্তৃপক্ষ অতীতে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এতে বাংলাদেশে আগত বিদেশিদের কাছেও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কঠোর কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এখন থেকে বিদেশফেরত যাত্রীদের লাগেজ নিয়ে কোনো অভিযোগ এলে মাত্রানুযায়ী ভোক্তা অধিকার আইনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে জেল-জরিমানা করতে পারবেন ম্যাজিস্ট্রেট। অন্যদিকে যাত্রীর সঙ্গে লাগেজ বা ব্যাগেজ না এলে তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হোম ডেলিভারি করতে হবে বিমান কর্তৃপক্ষকে। নির্দিষ্ট সময়ে না করতে পারলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষকে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের ভাবর্মূতি উজ্জ্বলসহ প্রবাসীদের আস্থা অর্জনে কঠোর এ পদক্ষেপ নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মো. মহিবুল হকের সভাপতিত্বে বিমানবন্দরে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর বিমানবন্দরে সভা হয়। সেখানে বিমান সচিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যাত্রী হয়রানি ও সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।

বেবিচক সূত্র জানায়, বিদেশফেরত যাত্রীদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ লাগেজ নিয়ে। বাংলাদেশ বিমানসহ বিভিন্ন এয়ারলাইনসের লোডারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা সুযোগ পেলেই যাত্রীদের লাগেজ কেটে মালামাল হাতিয়ে নেন। এতে দুর্নাম হয় বিমানবন্দরের। এন জন্য লাগেজ কাটার অভিযোগ পাওয়ামাত্রই খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমানের এই নীতিনির্ধারণী ফোরাম।

এতে সিদ্ধান্ত হয়, কোত্থেকে লাগেজটি কাটা হয়েছে, সবার আগে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আর লাগেজ কাটার বিষয়টি অন্য কোনো দেশের বিমানবন্দরে ঘটেছে কিনা তাও স্পষ্ট করে দ্রুত সময়ের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে। এর পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে লাগেজ প্রদানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উদ্যোগে বিমানবন্দরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির চারটি স্ক্যানিং মেশিন হস্তান্তর করা হবে বলেও সভায় জানানো হয়।

বিমানের ফ্লাইট বিলম্ব নিয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিদেশগামী যাত্রীদের কোনো ফ্লাইট উড্ডয়নে বিলম্বের তথ্য আগে থেকেই কল সেন্টারের মাধ্যমে জানানোর কথা রয়েছে। এ নিয়ে বিমান সচিব বলেন, ইদানীং প্রায় প্রতিটি ফ্লাইট বিলম্বে উড্ডয়ন করছে। ফ্লাইট বিলম্ব হলে সংশ্লিষ্ট যাত্রীদের এসএমএস ও মৌখিকভাবে অবহিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিমানের প্রতিনিধি অজুহাত দেখান, যাত্রীরা টিকিট কেনার সময় যে মোবাইল ফোন নম্বর দেন তা অনেক সময় বন্ধ থাকে।

বিমানবন্দর হয়ে বিদেশগামী ও বিদেশফেরত প্রবাসী শ্রমজীবীদের যাতায়াত প্রসঙ্গে মো. মহিবুল হক সভায় বলেন, প্রবাসী শ্রমজীবীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ রুটে বিমানবন্দর থেকে কয়েকটি সিটি বাস সার্ভিস চালুর বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। এ সময় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা বাস চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে বলে জানান।

বিমান সচিব বলেন, বিমানবন্দরে যাত্রীসেবার মান বাড়াতে হলে সবার আগে বিমানবন্দরে কর্মরতদের মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আনতে হবে। সেবার মানসিকতা গড়ার লক্ষ্যে ইতিবাচক মনোভাব বৃদ্ধির বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যে সবার আগে বিমানবন্দরের দপ্তরপ্রধানদের কাউন্সেলিং করাতে হবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার এএইচএম তৌহিদ-উল-আহসান আমাদের সময়কে বলেন, সভায় বিমানবন্দরে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি নিয়ে নানা সমস্যার কথা উঠে আসে। পাশাপাশি সমস্যাগুলো দূরীকরণে ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি ভবিষ্যতে করণীয় কিছু পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আশা করি এসব উদ্যোগ কার্যকর করা হলে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ তথা বিমানবন্দরের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

Pin It