রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশের যুবসমাজকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি তাদেরকে স্কাউটিংয়ে আরো বেশি সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্কাউটদের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি কার্যকর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের গুণগত মান নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক প্রয়াস অব্যাহত রাখার জন্য নির্দেশ দেন।
রাষ্ট্রপতি ও চিফ স্কাউট আজ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ স্কাউটস-এর জাতীয় কাউন্সিলের ৫০তম বার্ষিক সাধারণ সভা (সুবর্ণ জয়ন্তী) ও অ্যাওয়ার্ড বিতরণ উপলক্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এই নির্দেশনা দেন।
রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গভবন গ্যালারি হল থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধান জাতীয় কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, সম্মানিত স্কাউট নেতৃবৃন্দ ও কাউন্সিলরবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, স্কাউটিং একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী, অরাজনৈতিক ও শিক্ষামূলক আন্দোলন এবং প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি স্কাউটিং একটি সম্পূরক শিক্ষা ব্যবস্থা।
রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন, শিশু, কিশোর-কিশোরী ও যুবদের ধারাবাহিক ও পরিকল্পিত কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষা দিয়ে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই স্কাউটিংয়ের মূল উদ্দেশ্য।
আবদুল হামিদ বলেন, রবার্ট ব্যাডেন পাওয়েল প্রবর্তিত স্কাউট আন্দোলন আজ আপন মহিমায় পৃথিবীর ১৭১টি দেশে এগিয়ে চলেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত সোনার বাংলা ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য দেশের যুবসমাজকে উপযোগী করে গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘স্কাউট আন্দোলন এ লক্ষ্য অর্জনে একটি কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম। দেশের জন্য আগামীদিনের দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে বাংলাদেশ স্কাউটসের বলিষ্ঠ ভূমিকা আজ দেশে-বিদেশে স্বীকৃত ও প্রশংসনীয়।’
বাংলাদেশে বর্তমানে স্কাউটের সংখ্যা প্রায় ২২ লক্ষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে স্কাউট আন্দোলনকে জোরদার করতে সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, সরকারের প্রয়াসের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্কাউটসের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং স্কাউট সদস্যরা উন্নত প্রশিক্ষণে বলীয়ান হয়ে দেশ ও জাতি গঠনে আরো বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদেরকেও স্কাউটিংয়ে সমানভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে। মেয়েরা পিছিয়ে থাকলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।
রাষ্ট্রপতি হামিদ ২০২০ সালে ৭৯৪ জন স্কাউট সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড ‘প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট অ্যাওয়ার্ড’ ও ১৪ জন রোভার স্কাউট সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড ‘প্রেসিডেন্ট’স রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করায় সকল স্কাউট ও রোভার স্কাউট এবং লিডার ও অভিভাবকদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
তিনি স্কাউটের উদ্দেশ্য বলেন, “তোমরা ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে স্কাউট আদর্শের প্রতিফলন ঘটাবে এবং দেশের উন্নয়নে একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আত্মনিয়োগ করবে।’
রাষ্ট্রপতি নিজ নিজ অঙ্গনে নেতৃত্ব দিয়ে সেবামূলক কাজে বিভিন্ন সময়ে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, অগ্নিকান্ডসহ দুর্যোগকালে ক্ষতিগ্রস্তদের সেবাদানে স্কাউটসদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকারও প্রশংসা করেন।
আবদুল হামিদ উল্লেখ করেন, “দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ স্কাউটস ৪৭টি ডিজাস্টার রেসপন্স টিম গঠন করেছে। এছাড়া বৃক্ষরোপণ, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যশিক্ষা, ইপিআই কর্মসূচি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে স্কাউটরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন’।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আজকাল বিশেষ করে শহরাঞ্চলে উঠতি বয়েসী ছেলেরা মাদক, কিশোর গ্যাংসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। শিশু, কিশোর ও যুবদের অপরাধমূলক কর্মকান্ড, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের ছোবল থেকে দূরে রাখতে ধেলাধুলা ও সুস্থ বিনোদনের পাশাপাশি স্কাউটিং একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
রাষ্ট্রপতি হামিদ আরো বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আত্মনির্ভরশীল ও মূল্যবোধসম্পন্ন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রগতিশীল, সৃজনশীল ও উন্নয়নের পথে আনার লক্ষ্যে স্কাউটিং কার্যক্রমই নিজেদের সম্পৃক্ত করে দেশকে জাতির পিতার কাক্সিক্ষত সোনার বাংলায় রূপান্তর করতে পারে।