ভয়াবহ বিস্ফোরণে লেবাননের ভবিষ্যত ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। এ অবস্থায় দেশটির সহায়তায় দ্রুত এগিয়ে আসা বিশ্বনেতাদের দায়িত্ব বলে মনে করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
বৈরুতের পাশে দাঁড়াতে রোববার আয়োজিত জরুরি দাতা সম্মেলনে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘‘আজ আমাদের কাজ হল যত দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সম্ভব মাঠ পর্যায়ে আমাদের সাহায্যের সমন্বয় করা। যাতে যথাসম্ভব শিগগিরই তা লেবাননের জনগণের কাছে পৌঁছানো যায়।”
গত কয়েক বছর ধরে চরম রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা এবং বিশাল অংকের ঋণের বোঝার চাপে লেবননের অর্থনীতি বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিল।
তার মধ্যে গত মঙ্গলবার রাজধানী বৈরুতের বন্দর এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ দেশটিকে খাদের কিনারে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে। বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৫৮ হয়েছে। আহত হয়েছেন ছয় হাজারের বেশি মানুষ। আড়াই লাখ মানুষের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।
বিস্ফোরণের দুইদিন পর গত বৃহস্পতিবার বৈরুত সফরে যান ম্যাক্রোঁ। সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর দ্রুত দেশটির দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে রোববার অনলাইনে জরুরি সম্মেলন আয়োজন করেন তিনি।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ম্যাক্রোঁ বলেন, জাতিসংঘের মাধ্যমে লেবাননের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার সমন্বয় হওয়া উচিত।
বৈরুত বন্দরের গুদামে গত প্রায় ছয় বছর ধরে অবহেলায়-অনিরাপদ অবস্থায় পড়ে থাকা ২,৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটকে মঙ্গলবারের ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণের কারণ বলা হচ্ছে। যাতে কেঁপে উঠেছিল পুরো নগরী।
অথচ প্রচণ্ড দাহ্য ওই পদার্থগুলো লেবাননে যাওয়ারই কথা ছিল না। এ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন দেশটির জনগণ। তারা সরকারের কাছে এ অবহেলার জাবাবদিহিতা চেয়ে আন্দোলন শুরু করেছেন।
দীর্ঘদিন ধরেই লেবাননের বর্তমান সরকারের উপর জনগণের আস্থা নেই। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক নেতারা তাদের পাঠানো সাহায্য কতটা দেশটির জনগণের হাতে পৌঁছাবে না নিয়েও উদ্বিগ্ন।
এ বিষয়ে ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘‘আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, লেবাননের পুনর্গঠনের জন্য দেওয়া সহায়তা দুর্নীতিবাজদের হাতে যাবে না।”
ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও তার ধ্বংসলীলার কারণে গত কয়েকদিন ধরে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে খবরের শিরোনাম হচ্ছে বৈরুত। অনেক দেশ লেবাননে চিকিৎসা সরঞ্জামের মত জরুরি সহায়তা পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো দেশ আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়নি বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব সহায়তা করা। আমাদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। লেবাননের ভবিষ্যত মারাত্মক ঝুঁকিতে।”
ইরান এবং ইসরায়েল এই ভিডিও সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে না বলে জানায় রয়টার্স।
বিবিসি জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধি, চীন, রাশিয়া, মিশর, জর্ডান, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের এই সম্মেলনে অংশ নেওয়ার কথা। এছাড়া, জাতিসংঘ, আইএমএফ, রেড ক্রস এবং আরব লীগের প্রতিনিধিরাও থাকবেন।
এক টুইটে ট্রাম্প জানান, তিনি বৈরুতের বিপর্যয় নিয়ে ম্যাক্রোঁর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং সম্মেলনে অংশ নেবেন।
তার টুইট, ‘‘সবাই সাহায্য করতে চায়।”