একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দুই প্রার্থী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ও মোকাব্বির খান সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে ৭ মার্চ শপথ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন গণফোরামের এ দুই নেতা। যদিও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিলে সদস্যপদ হারানোর ঝুঁকি রয়েছে তাদের।
সুলতান মনসুর জানান, তিনি ও মোকাব্বির খান ৭ মার্চ শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে এরই মধ্যে পৃথকভাবে স্পিকারের দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন। স্পিকার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করবেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন শনিবার সন্ধ্যায় জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনি চিঠি পাননি। চিঠি পেলে রোববার অফিসে গিয়ে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেওয়া প্রসঙ্গে সুলতান মনসুর বলেন, তিনি তার এলাকার জনগণের স্বার্থের বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। অসম্ভব প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভোটাররা তাকে ভোট দিয়েছেন। তাই নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে শপথের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তিনি। এ জন্য দল থেকে বহিষ্কার কিংবা সদস্যপদ হারানোর ঝুঁকির ব্যাপারে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দিতে চান না বলে জানান সুলতান মনসুর।
মার্চের শুরুতে শপথ নেওয়ার কথা আগেই জানিয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। গণফোরাম থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন সুলতান মনসুর। তার মতো ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন নিয়ে সিলেট-২ আসনে উদীয়মান সূর্য নিয়ে প্রার্থিতা করে বিজয়ী হন গণফোরামের মোকাব্বির খান। জোটগতভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করায় গণফোরামসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলের বিজয়ীরা সংসদে শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্থানীয় ভোটার ও নেতাকর্মীদের চাপে শপথ নিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন সুলতান ও মোকাব্বির।
এ প্রসঙ্গে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, দলীয়ভাবে শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। দল থেকে বিজয়ী দুই প্রার্থী স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন- এমন তথ্য জানা নেই বলে দাবি মন্টুর। তবে বিজয়ী দুই প্রার্থী দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
নির্বাচনী আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘সংসদ সদস্য হওয়ার বা সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবে না, যদি তিনি কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনীত না হন বা স্বতন্ত্র প্রার্থী না হন।’ সে হিসেবে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বহিষ্কৃত হলে সুলতান ও মোকাব্বিরের এমপি পদে টিকে থাকার সুযোগ নেই। তবে সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি ১৭৮ ও সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্যের যোগ্যতা বা অযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে স্পিকার তা নিষ্পত্তির জন্য বা অধিকতর শুনানির জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাতে পারবেন। এর আগে দশম সংসদেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করা হয়। তখন স্পিকার বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছিলেন। ইসির পক্ষ থেকে শুনানিও করা হয়। কিন্তু রায় দেওয়ার আগেই সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন লতিফ সিদ্দিকী। লতিফ সিদ্দিকী ইসির শুনানির এখতিয়ার নিয়ে হাইকোর্টে রিট করলে তা খারিজ হয়ে যায়। পুনরায় আপিলেও তার রিট আবেদন খারিজ হয়। এর মধ্যেই ইসি ২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করে। তবে শুনানির আগেই ১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সংসদের অধিবেশনে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
এর আগে সপ্তম সংসদে বিএনপিদলীয় সদস্য ডা. আলাউদ্দীন ও হাসিবুর রহমান স্বপনকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ঐকমত্যের সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন। তাদের সদস্যপদ থাকবে কি-না, এ নিয়ে বিতর্ক আদালতে পৌঁছায়। কিন্তু পরে তাদের আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়েছিল।