শপথ প্রশ্নে দোটানায় বিএনপির ৪ এমপি

BNP-5cc35d542b528

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ গ্রহণ করায় ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সাংসদ জাহিদুর রহমান জাহিদকে বহিস্কার করেছে বিএনপি। গতকাল শনিবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে মির্জা ফখরুল বাদে বিএনপির নির্বাচিত চার এমপি শপথ নিয়ে লুকোচুরি করছেন। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন কি না- তা নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথা বলছেন না তারা। আবার শপথ নেবেন কি না তাও স্পষ্ট করছেন না। দলের পক্ষ থেকে চার এমপির সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখায় শপথ নিয়ে তারাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন বলে সূত্র জানায়।

জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিজয়ী এমপিদের সঙ্গে আরও বেশি যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে নির্বাচিত এমপিদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলের নির্দেশনার বাইরে এসব এমপি কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তাদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকবে দলটি। তবে দলের কঠোর বার্তার পরও শেষ মুহূর্তে অন্তত দু’জন শপথ নিতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

সংবিধান অনুযায়ী, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী এমপিদের আজ রোববার অথবা কাল সোমবারের মধ্যে শপথ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সংসদের প্রথম বৈঠকের পরবর্তী  ৯০ দিনের মধ্যে শপথ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় সদস্যপদ বাতিল করে আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে। একাদশ সংসদের প্রথম বৈঠক বসে এ বছরের ৩০ জানুয়ারি। এই হিসাবে ২৯ এপ্রিলের মধ্যেই নির্বাচিত সদস্যদের শপথ গ্রহণ করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সংসদে শপথ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত রয়েছে তাদের। দলের এই সিদ্ধান্তকে অমান্য করায় জাহিদুরকে প্রাথমিক সদস্যসহ দলের সব পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ শপথ নিলে বহিস্কারের পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। আইনি বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকের আগে নেতারা দল সমর্থিত আইনজীবীদের সঙ্গেও বৈঠক করেন।

বৈঠকে আইনজীবীদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের মহাসচিব ছাড়াও ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে স্কাইপের মাধ্যমে লন্ডন থেকে যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

কী করবেন নির্বাচিত চার নেতা :একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে বিজয়ী হয়েছেন ছয়জন। তারা হলেন- বগুড়া-৬ আসনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বগুড়া-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মো. আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে হারুনুর রশীদ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাহিদুর রহমান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া।

গত বৃহস্পতিবার জাহিদ স্পিকারের কাছে শপথ নেওয়ার পর থেকেই নড়েচড়ে বসেন দলটির শীর্ষ নেতারা। অন্যদের শপথ ঠেকাতে যোগাযোগ করতে থাকেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিয়মিত কথা বলছেন তাদের সঙ্গে। কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিনিধি পাঠিয়ে তাদের দলের সিদ্ধান্ত মানার জন্য বলা হচ্ছে। তবে এমপিরা নিশ্চিত কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি বলে জানা গেছে। দলের কঠোর অবস্থানের পরও তারা বিভিন্ন ফোরামে শপথ নেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের এমপি হারুনুর রশীদের ঘনিষ্ঠজনেরা জানান, সব কিছু ঠিক থাকলে আজ রোববার তিনি শপথ নিতে পারেন। তার সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের এমপি মো. আমিনুল ইসলামও শপথ নিতে পারেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানা বিএনপির সভাপতি তসিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার শপথ নেওয়ারই কথা। তবে এখনও কিছু জটিলতা রয়েছে। দলের চাপে একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন হারুন। সবকিছু কাটিয়ে উঠে তিনি শপথ নিতে পারেন বলেই তিনি মনে করছেন।

হারুনুর রশীদকে শুক্রবার সমকালকে বলেছেন, আগামী ৩০ এপ্রিলের আগে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না। অন্যদিকে আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের এমপি উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বলেছেন, দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি তার আস্থা আছে। অবশ্য তার মনোভাব জানতে এবং তাকে দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে অনুরোধ করতে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া ও আব্দুল আউয়াল গতকাল শনিবার তার নির্বাচনী এলাকায় যান। সেখানে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক বর্ধিত সভায় অংশগ্রহণ করেন তারা। বৈঠকে নেতাকর্মীরা শপথ না নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন বলে জানা গেছে।

আব্দুল আউয়াল জানান, উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া দলের অনেক প্রবীণ নেতা। তিনি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না।

বগুড়া-৪ আসনের এমপি মোশাররফ হোসেন বলেছেন, তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলবেন। বগুড়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম জানান, কোনো অবস্থাতেই বগুড়া-৪ আসনের এমপি মোশাররফ হোসেন শপথ নেবেন না বলে তাদের জানানো হয়েছে। তার ওপর দলের নেতাকর্মীদের আস্থা রয়েছে।

Pin It